রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপিকে আর মানবতা দেখানোর সুযোগ নেই

যৌথ সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপিকে অনেক মানবতা দেখানো হয়েছে, আর মানবতা দেখানোর সুযোগ নেই। তারা সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভার মুলতবি বৈঠকে নেতারা এসব কথা বলেন।

তারা আরও বলেন, ১/১১ সময়ে যারা রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল, সেই শক্তি আবারও তৎপর। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু। নির্বাচনের আগে এগুলো শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। 

বৈঠক সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার কিছু পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। এতে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির প্রায় ২০ জন সদস্য বক্তৃতা করেন। এতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, রশিদুল আলম, গোলাম মওলা নক্সবন্দী, অ্যাম্বাসাডর মোহাম্মদ জমির, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম, বজলুর রশিদ, সুলতানা শফি, জাতীয় পরিষদের সদস্য চন্দন শীল, খলিলুর রহমান মন্ডল, জোবাইদা খাতুন পারুলসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জিং। এটা মাথায় রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাম্বাসাডর মোহাম্মদ জমির বলেন, নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। শুধু বিদেশিরাই নয়, দেশের একটি শ্রেণি সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা ১/১১ সময়ে কূটনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল, তারা তৎপর হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।

জাতীয় পরিষদের সদস্য চন্দল শীল বলেন, আওয়ামী লীগকে কখনো নির্বাচনে হারানো যায়নি। বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে হারানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি আজকে মানবতার কথা বলে। কীসের মানবতার কথা বলে তারা? যে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা এবং জেলহত্যার সঙ্গে জড়িত, যারা অন্তঃসত্ত্বা আরজু মনি, শিশু রাসেলকে রেহাই দেয়নি তাদেরকে মানবতা দেখাতে হবে? এখানেই শেষ নয়, তারা রাষ্ট্রীয় মদদে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গ্রেনেড হামলা করেছিল। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জে পার্টি অফিসে বোমা হামলা করা হয়েছিল। সেখানে ২০ জন দলীয় নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছিল। আমি দুটি পা হারিয়েছি। নেত্রী আমাকে সুচিকিৎসা করিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়, বিএনপি-জামায়াতের মদদে গোপালগঞ্জে নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশে ৭০ কেজি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। বাগেরহাটে শেখ হেলালের জনসভায়, যশোরে উদীচী, পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের সামনে বোমা হামলা করা হয়েছিল। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা করা হয়েছিল। সেই দলের সঙ্গে মানবতা দেখাতে হবে?

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে যেতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বিএনপি আমাদেরকে (আওয়ামী লীগ) চোর বলে। একেই বলে, চোরের মায়ের বড় গলা।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সভায় জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন নেতা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বর্তমানে আওয়ামী লীগের জন্য বড় সমস্যা বলে মত দেন। একাধিক নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যতই চেষ্টা করুক, আওয়ামী লীগের ক্ষতি করতে পারবে না। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতারাই। নেতাদের দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার দ্রুত নিরসন জরুরি।

সর্বশেষ খবর