ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। গতকাল জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা প্রার্থীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।
জানা যায়, শুক্রবার কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হওয়া বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে উপনির্বাচনের আট মাস পরই সেখানে হওয়া পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে প্রার্থীরা যেন সিদ্ধান্ত মেনে নেন সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। মূলত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সুবিধা দিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আবদুস সাত্তার কিংবা অন্য প্রার্থী জয়ী হলে সেক্ষেত্রে দলীয় কৌশল বাস্তবায়ন হবে, যেটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা।
এ অবস্থায় আসনটিতে কপাল খুলতে যাচ্ছে পদত্যাগ-পরবর্তী বহিষ্কার হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও পাঁচবারের এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার। সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তার ভূঁইয়াকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিন প্রার্থী অংশগ্রহণ করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। দলীয় বিভক্তি রুখতে ওই তিনজনকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। প্রার্থীদের প্রত্যাহারে দলীয় কোনো চাপ ছিল না। প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না বলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে আগামী নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুতি নেব। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন বলেন, অল্প সময়ের জন্য এমপি হয়ে যেহেতু মানুষের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে পারব না তাই আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। আমি মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা হারাতে চাই না। আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু জানান, অল্প সময়ের জন্য আমি উপনির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছি না। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন হবে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এ আসনটিতে তাদের দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত ঘোষণা করে। এদিকে ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচবারের এমপি ৮৪ বছর বয়সী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পর পরই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। প্রসঙ্গত, সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ১৫৩ জন। আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোট সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৭০টি।
