রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ কমানোর শর্তে আইএমএফ খুশি আমরাও খুশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণ কমানোর শর্তে আইএমএফ খুশি আমরাও খুশি

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বড় কথা নয় বরং দেখতে হবে, প্রবণতা কী। রিজার্ভের প্রবণতা নিচের দিকে নামতে থাকলে ঠেকানো কঠিন। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন আজ শেষ হবে এবং এ সম্মেলনে অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদরা। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের রিজার্ভ এক সময় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারও ছিল। তাই বলছি, পরিমাণ অনেক সময় বড় সমস্যা নয়, প্রবণতাটাই বড় কথা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিতে অনেক শর্তের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানোর কথাও আছে। আইএমএফ বলেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। সম্মেলনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণ দিতে এবার আইএমএফ বেশি শর্ত দেয়নি। আহসান মনসুরের এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক দশক ধরে দেখেছি, কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে? এটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যাপার। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে আইএমএফের আমলাতন্ত্র খুশি, আমরাও খুশি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশের বেশি উল্লেখ করে বেসরকারি খাতে শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে সন্তোষ প্রকাশ করেন। শামসুল আলমের এই কথা প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যয়ের বিকল্প নেই, বেসরকারি খাত থাকবে পরিপূরক হিসেবে।

ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় ৫ শতাংশের বেশি। শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এখন সমান। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এই পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিকে দায়ী করা হচ্ছে। এই প্রথম অন্য একটি ব্যাখ্যা এলো। যদিও এই ‘অভ্যন্তরীণ সংকটের’ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি তিনি। তার মতে অর্থনৈতিক সংকট যতটা না বৈশ্বিক সৃষ্টি, তার চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ। দুই দিনের এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের দেড় শ অর্থনীতিবিদ অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ২৩টি অধিবেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অর্থনীতি-গবেষকরা ৮০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। গত কয়েক মাস ধরে অর্থনীতির যে চাপ, তার নেপথ্যে বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে অভ্যন্তরীণ দায়ই বেশি দেখছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। অর্থনৈতিক এই সংকট থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, সেটি দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইএমএফ আমাদের আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছে সেগুলো যৌক্তিক। তাদের (আইএমএফ) পরামর্শে আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। এসব প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় এখন অন্যান্য দাতা সংস্থাও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো গত একটি বছর কঠিন যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্যও। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যতে আরও বেশি প্রভাব, ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্রমাগত পতন, প্রবাসী আয়ে ভাটা, ইত্যাদির কারণে গত এক যুগের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে বলে যে সমালোচনা করা হয়, সেটি নিয়েও বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই আছে, তবে সংসদে অনেক সদস্যই ব্যবসায়ী।

সর্বশেষ খবর