বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাপে পড়ে বীমার টাকা দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাপে পড়ে বীমার টাকা দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ইন্স্যুরেন্সের টাকা দিতে হবে। যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বীমা দিবস-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দাবিদার দাবি করবে বড় একটা। তার প্রকৃত ক্ষতিটাকে যাচাই-বাছাই করেই অর্থ দেবেন। সেটা কেন করা হয় না? আমি মনে করব, যারা তদন্ত করতে আসে তারাও কি এর ভাগীদার? তাদেরও নিশ্চয়ই হাত আছে। সেটাও আমার সন্দেহ হচ্ছে।’

অতীতের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় দেখা যেত গার্মেন্টসে শুধু আগুন লাগত। হঠাৎ কোনো এক গার্মেন্টসে আগুন লাগে। তারপর ইন্স্যুরেন্সের টাকা চায়। এবার মোটা অঙ্কের একটা টাকা চাইল। তখন আমি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বললাম যে, আপনারা এখন টাকা দেবেন না, আমি তদন্ত করাব। তদন্ত করে দেখা গেল, ওই গার্মেন্টসের এক মেয়েশ্রমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আগুন দিয়ে তারপর ইন্স্যুরেন্সের মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। যেখানে কিছু নেই, যেখানে তারা বসে খাওয়া-দাওয়া করত, সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছিল। ওই মহিলাকে যখন ধরা হলো তখন সে স্বীকার করল তাকে দিয়ে এটা করা হয়েছে। এত ঘন ঘন আগুন একটা জায়গায় লাগবে কেন? সে ক্ষেত্রে বীমা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকা দরকার।’ আগুনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগুনে কতটুকু ক্ষতি হলো সেটা যথাযথভাবে তদন্ত করা দরকার। যথাযথভাবে তদন্ত না করে, কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না। একটা ফ্ল্যাটে কী সম্পদ থাকতে পারে যে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাকে ৪০ কোটি টাকা দেবে? আপনাদের কাছে এর জবাব আছে? তাহলে কীভাবে গেল সাধারণ বীমা থেকে। আমার কাছে এই ধরনের একটা ঘটনা এসেছে সামনে। আমি এটাও তদন্ত করাব। কত সম্পদ একটা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে আছে যে তার ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেল আর বীমা থেকে টাকা নিয়ে গেল? যার ঘরটা সবচেয়ে বেশি পুড়ল তার বীমাও নেই। সে কিছু পেল না। এসব বিষয়ে সবাইকে একটু নজর দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীমা পলিসি মানুষ যাতে গ্রহণ করে তার জন্য আপনাদের প্রচার করতে হবে। সেই প্রচারটা ব্যাপকভাবে করতে হবে। আগে অনেক যুবসমাজ বীমার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করত। সেই এজেন্ট নিয়োগ করা এবং তাদের দিয়ে কাজ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কর্মসংস্থানেরও একটা সুবিধা হবে। বেকার যুবকরা এই পেশায় যাতে আরও বেশি আসে, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিবহনের ব্যাপারটা আমি দেখব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে বীমা খাতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বীমা কোম্পানিসমূহকে গ্রাহকের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে সেবার মান উন্নয়নসহ বীমার টাকা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বীমা আইন যুগোপযোগী করেছে। এই খাতকে ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। বীমা মানুষকে সুরক্ষা দেয় এবং জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক হয়। এ ছাড়া নীতিমালা প্রণয়নসহ মানুষকে এর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বীমা কোম্পানিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাকরিজীবনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন-জীবিকার জন্য আমার বাবা বীমা কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেই কোম্পানির মালিক ছিলেন আমার বাবার বন্ধু। মূলত তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) দায়িত্ব দেন তিনি। কিন্তু এটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ১৯৬২ সালে বাবাকে গ্রেফতার করা হয়।’ সেই বীমা কোম্পানিতে বসে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা প্রণয়ন করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাবিগুলো লেখেন মোহাম্মদ হানিফ। পরে এক বিজ্ঞ ব্যক্তি সেটি ভাষান্তর করেন। যেসবের ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন হয়। তাই দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে বীমার এক যোগসূত্র রয়ে গেছে।’

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এতে আরও বক্তব্য দেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন। বীমা দিবস উপলক্ষে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

সর্বশেষ খবর