শিরোনাম
রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফের ভয়াবহ বিস্ফোরণ চট্টগ্রামে

ধ্বংসস্তূপ অক্সিজেন প্লান্ট নিহত ৬ আহত ৩০

মুহাম্মদ সেলিম, আজহার মাহমুদ ও ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

ফের ভয়াবহ বিস্ফোরণ চট্টগ্রামে

আবারও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড’ নামে একটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী কারখানায় অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু হতাহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রাত ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণে নিহত পাঁচজনের লাশ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। ভাটিয়ারী বিএসবিএ হাসপাতালে রাখা হয়েছে আরেকজনের লাশ।’ নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলেন শামসুল আলম (৬৫), মো. ফরিদ (৩৬), রতন (৪৫), আবদুল কাদের (৪০) ও সালাউদ্দিন (৩৩)। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩০ জনকে, যাদের সিংহভাগেরই অবস্থা সংকটাপন্ন। গতকাল বিকালে জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। তবে সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। তাদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা সংকটাপন্ন। আহতদের চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেবে জেলা প্রশাসন।’ সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার অন্যান্য দিনের মতো এ দিনটিও ছিল স্বাভাবিক। আসরের নামাজ ঘনিয়ে আসায় কেউ কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মসজিদে যাওয়ার। আবার কেউ যাচ্ছিলেন হাটে বাজার-সওদা করতে। ঘড়ির কাঁটা ৪টা ৩৫ মিনিট। এমন সময় বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সোনাইছড়ি এলাকার সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের অক্সিজেন প্লান্ট। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়। এমন বিস্ফোরণের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। বিস্ফোরণের পর অক্সিজেন প্লান্টের লোহা এবং কারখানার ছাদ আছড়ে পড়ে কয়েক শ গজ দূরে। কারখানার আশপাশের কয়েক শ গজ দূরের বসতবাড়ির ঘর ও স্থাপনার দেয়াল ভেঙে যায়। উড়ে যায় টিনের তৈরি ঘরের ছাদ। ভেঙে যায় ঘরের দরজা-জানালা। ১ কিলোমিটার দূরের অনেক ঘরের দেয়ালেও ফাটল দেখা দেয়। পাশে থাকা অনেক কারখানার ছাদ উড়ে গেছে। বিস্ফোরণের পর পর স্থানীয় লোকজন প্রাথমিকভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও উদ্ধারের যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৩০ জনকে, যাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের সিংহভাগেরই অবস্থা সংকটাপন্ন। কারখানার ভিতর আর কোনো হতাহত ব্যক্তি রয়েছে কি না তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। কদমরসুল এলাকার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। বিস্ফোরণের পর এক-দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে অক্সিজেন প্লান্টের লোহা। এখান থেকে উড়ে যাওয়া লোহা মাথায় পড়ে আমার চাচা শামসুল আলম নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। বিস্ফোরণের পর থেকে আমি এখানে আছি। কারখানায় প্রবেশের মুখেই দেখি ছয়জনের লাশ পড়ে আছে। ভিতরে প্রবেশ করে আমরা উদ্ধারকাজ শুরু করি।’ প্রত্যক্ষদর্শী যুবক ওমর ফারুক বলেন, ‘আসরের আজান দেওয়ার সময় হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় পুরো এলাকা প্রচণ্ড কেঁপে ওঠে। মনে হয়েছে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত এনেছে। বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা তিন বন্ধু অক্সিজেন প্লান্টে প্রবেশ করি। দেখি অনেক লোক পড়ে আছেন। কারও পুরো শরীর পুড়ে গেছে। আবার কারও শরীরের আংশিক অংশ পুড়ে গেছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। প্লান্টের ছাদ উড়ে গেছে। ওই সময় মনে হয়েছে আমরা কেয়ামত প্রত্যক্ষ করছি। সময়ক্ষেপণ না করে আমরা উদ্ধারকাজে নেমে পড়ি। এখন পর্যন্ত কয়জন লোক উদ্ধার করেছি তা জানি না।’ সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল বলেন, অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট কাজ শুরু করেছে। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। ওই কারখানায় গাড়ি নিয়ে আসা আলম হোসেন বলেন, ‘বিকালে কারখানার জন্য বালু নিয়ে আসি। তখন শ্রমিকরা বালু আনলোড করছিলেন। এ সময় বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের পর অনেকক্ষণ কানে শুনিনি।’

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে। গতকাল রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যও রাখা হবে।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা রি-রোলিং মিলের অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনার দুটি খণ্ডচিত্র।      -বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

রোমহর্ষক দৃশ্য হাসপাতালে

আঘাত এক কিমি দূরেও

আঁই এহন হন্ডে যাইয়ুম

 

সর্বশেষ খবর