বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে বিনিয়োগে এক নম্বরেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র : হাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে বিনিয়োগে এক নম্বরেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র : হাস

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে আছে এবং ভবিষ্যতেও এ স্থান ধরে রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গতকাল ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চেয়ারম্যান মো. নূর আলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা। গতকাল সকালে পিটার হাস হেলিকপ্টারে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছালে তাকে প্রকল্প ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি সর্বশেষ অবস্থা বর্ণনা করা হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সব আইন মেনে সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক উচ্চমান বজায় রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং উন্নত জীবিকা নিশ্চিতের জন্য জীবিকা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) কার্যক্রম হিসেবে সুবিধাবঞ্চিতদের মাসিক ভাতা, নদীঘাট নির্মাণ এবং ঘাটের অ্যাপ্রোচ রাস্তা, দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে। ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী ভূমিকার জন্য পিটার হাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রচলিত গ্যাস টারবাইনের দক্ষতা গড়ে ৩০-৪০ শতাংশ। এ কেন্দ্রে জিই-এর সর্বশেষ ৯ঐঅ.০১ গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ৬২ শতাংশের বেশি দক্ষতায় কাজ করে। কেন্দ্রটি বিদ্যমান অন্যান্য কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের তুলনায় কম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করবে এবং প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ইউএমপিএল, জিই এবং নেব্রাসসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় এসইআরভি, এআইআইবি, ডিইজি ও ওপেক তহবিল থেকে প্রকল্পে বিনিয়োগ এসেছে। এ বিনিয়োগ এখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের জনগণকে পরিবেশবান্ধব, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. নূর আলী বলেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সক্ষমতার প্রতীক। উচ্চ প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণেই বিপিডিবির কাছে মেরিট অর্ডারে শীর্ষ স্থান দখল করবে। এ প্রকল্পের কল্যাণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। জিই গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা বলেন, জিই গ্যাস পাওয়ার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বড় অবদান রেখে চলেছে। ইউএমপিএলের প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে জিই গর্বিত। কেন্দ্রটিতে জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় অনেক প্রাকৃতিক গ্যাস বেঁচে যাবে। কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় ৭ লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা যাবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড ও জিই-এর কনসোর্টিয়াম ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিককে (জিই) এ প্রকল্পের ঠিকাদার নিযুক্ত করে। পরে নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভি ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারত্ব নিয়ে প্রকল্পে যুক্ত হয়। জিই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ইসিই-এসইআরভি কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ডিইজি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর