র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ‘অসহায় মানুষকে সহায়তা করাই আমাদের লক্ষ্য। আপনারা নিরীহ, অসহায়, বিপদগ্রস্ত মানুষকে আন্তরিকতা এবং যতটুকু ক্ষমতা আছে তা দিয়ে সহযোগিতা করুন। দেখবেন দিন শেষে চাকরিজীবন থেকে অবসরে গিয়ে তৃপ্তি পাবেন। কিন্তু যদি উল্টোটা করেন, মিস বিহ্যাভ করেন, তাহলে আপনার বিবেক আপনাকে কষ্ট দেবে। আমরা শাসক না, সেবক হতে চাই।’

এলিট ফোর্স র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও র‌্যাব মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ উপলক্ষে মহাপরিচালকের দরবারে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, ক্যাম্প কমান্ডারসহ উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। র‌্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা আজ শহীদ পরিবারের কথা শুনেছি। আমরা হয়তো কিছু আর্থিক সহায়তা ও উপহার প্রদান করি। কিন্তু যে সন্তান পিতাহারা, যে স্ত্রী স্বামীহারা হয়েছেন, তাদের শূন্যতা আমরা পূরণ করতে পারব না। যারা শহীদ হয়েছেন তারা আমাদের অহংকার। আমাদের দায়িত্ব হবে শহীদ পরিবারের পাশে থাকা, সব ধরনের সহযোগিতা করা।’ উপকার করতে না পারলেও আন্তরিকতায় যেন কোনো ঘাটতি না থাকে, সে জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন র‌্যাব প্রধান। অতিরিক্ত আইজিপি খুরশীদ বলেন, ‘রবিবার দরবারে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অন্য কোনো চিন্তা নেই, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমাদের ভরসা আমরা এ দেশেরই মানুষ। আমরা কাজ করি দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সবার মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে, র‌্যাব ভরসাস্থল, নিরাপত্তা-আস্থার প্রতীক, ভালোবাসার জায়গা। আমি চাই আমার প্রতিটি সদস্য এই আস্থা ধরে রেখে কাজ করবেন।’ তিনি বলেন, সমাজের যে অবস্থা, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে তা উপলব্ধি করি। সমাজের আসল চিত্রটা অন্য রকম। অনেকে ব্যবসা করে পুঁজি খাটিয়ে টাকা পাচ্ছেন না, ফ্ল্যাট বুকিং দিয়ে ফ্ল্যাট পাচ্ছেন না, জমির টাকা দিয়েও জমি পাচ্ছেন না। আমাদের কাছে এলে আমরা বলি থানায় যান, জিডি করেন, মামলা করেন। মানুষ কিন্তু সেখানেও সুরাহা পান না। আমি বলব, অসহায় মানুষ আমাদের কাছে আসবে, আমরা শুনব, আইনের মধ্য থেকে যতটা পারা যায় অসহায় মানুষের পাশে থাকব। তবে আমার নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। আমি যেন সেই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে আমার অন্য অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না চাই। অসহায় মানুষকে কতটা সহায়তা করতে পারলাম সেটাই হবে আমাদের লক্ষ্য। যখন অবসরে চলে যাব তখন এ সুযোগ থাকবে না।’ র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের খবর পেয়েছি, সিওদের কাছে গেলে কথা শোনেন, কথা বলেন, কিন্তু ক্যাম্প ইনচার্জরা তা শোনেন না, যা মার্ক করা হয়েছে। শহীদ পরিবার শুধু না, যে কোনো প্রান্তের মানুষ যখনই কোনো ক্যাম্পে যাবে তাকে অবশ্যই অ্যাটেন্ড করতে হবে। ক্যাম্প কমান্ডারদের বলব, পরবর্তী সময়ে আমি আর এ ধরনের অভিযোগ শুনতে রাজি নই যে আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলেননি, সহযোগিতা করেননি। কারণ আপনি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলেন। অবশ্যই আপনাকে পাবলিক হেয়ারিং দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সারা জীবন ফিল্ডে, জেলা, রেঞ্জে পুলিশ সদরে কাজ করেছি। পুলিশ সদরেও যখনই কেউ এসেছে তারা স্টাফ অফিসারের মাধ্যমে আমার কাছে এসেছে। আমি তাদের কথা শুনেছি। চেষ্টা করেছি তাদের জন্য। সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি, ওসিকে জানিয়েছি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। প্রত্যেকটা মানুষকে অ্যাটেন্ড করতে হবে। পাবলিক হেয়ারিং কনফার্ম করবেন। প্রয়োজনে পাবলিক হেয়ারিং টাইম বেলা ১১টা থেকে ২টা করেন। কিন্তু এটা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। সিওকে জানাবেন। আপনাকে অফিসে থাকতে হবে।’ বক্তব্যের শুরুতে র‌্যাব ডিজি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নৃশংসভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন শহীদ র‌্যাব সদস্যদের। করোনাকালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে জীবন উৎসর্গকারী আট র‌্যাব সদস্যের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।