বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

শৃঙ্খলা ভঙ্গে হার্ডলাইন বিএনপিতে

অভিযোগ প্রমাণিত হলে দল থেকে বহিষ্কার

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

শৃঙ্খলা ভঙ্গে হার্ডলাইন বিএনপিতে

দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। দৃঢ়তার সঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রাখতে চায় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। গত এক বছরে সারা দেশে দল ও অঙ্গ-সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারসহ নানা কারণে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতদের অধিকাংশই দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার হন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অংশ নিতে পারেন দলের এমন অর্ধশত শীর্ষ নেতার তালিকা হাইকমান্ডের কাছে রয়েছে। স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির এসব শীর্ষ নেতা রয়েছেন বিশেষ নজরদারিতে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সতর্ক নোটিস না দিয়ে আগামীতে সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কোনো মূল্যে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান। সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের মধ্যে সেই বার্তা দিতেই শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ সিদ্ধান্তে অনড় দলটির হাইকমান্ড। কিন্তু দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ করে যারা তরুণ, এলাকায় জনপ্রিয় অথচ বিগত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তারা কোনো ফাঁদে পড়ে আগামী নির্বাচনে দলের বাইরে গিয়ে ভোটে অংশ নিতে পারেন। বিএনপি নেতাদের ধারণা, সরকারের প্রেসক্রিপশনেই এমনটি করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ১/১১ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিতে আর সংস্কারপন্থি বানাতে চান না দলটির শীর্ষ নেতারা। এবারও সরকার থেকে বিএনপির একটি বলয়কে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীল নকশা করবে-এটি মাথায় রেখেই সন্দেহভাজনদের প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন দলটির নেতারা। এবার দলের ভিতর ১/১১-এর মতো পরিবেশ দেখতে চায় না। এর আগেই চিহ্নিতদের শেকড় উপড়ে ফেলতে নির্বাচনের আগেই কঠিন সিদ্ধান্তে যাবে বিএনপি। জানা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে অংশ নেবে না, কাউকে মনোনয়নও দেবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ অংশ নিলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলের কোনো নেতা ভোট করলেও শাস্তির মুখে পড়তে হবে। গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের কোনোটিতেই বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানা গেছে। আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মধ্যে তিন ধাপে পাঁচ সিটিতে ভোট করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

বিএনপি বলছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। বরং কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও ছাড় পাবেন না। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পরও বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু নানা অভিযোগ ও অনিয়মের কারণে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো ভোটে যাবে না সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই ঘোষণার পর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার অংশ নিলে প্রথমে তার পদ স্থগিত, পরে বহিষ্কার করা হয়। ওই বছরেই জুনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তৎকালীন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচন করলে তাকেও বহিষ্কার করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের চারটিতেই হেরে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। ২০১৮ সালের ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে হাসান উদ্দিন সরকার, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, একই দিন অনুষ্ঠিত বরিশালের নির্বাচনে মজিবর রহমান সারোয়ার এবং ২০১৮ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, দলের সিদ্ধান্ত আছে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। দল যদি প্রার্থী হতে বলে তাহলে আমার সিদ্ধান্তেরও পরিবর্তন হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে অতীতেও কোনো ভুল করেনি, এখনো করে না। যারা ভুল করবে, অন্যায় করবে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন চক্রান্তকারীদের জন্য এটি একটি মেসেজ। দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে কাজ করা যাবে না। দলের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রীদের কোনো ক্ষমা নেই।

সর্বশেষ খবর