শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে, কারও কোনো জবাবদিহি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে, কারও কোনো জবাবদিহি নেই

কাজী ফিরোজ রশীদ

সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জানতে চেয়েছেন, ‘ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে, কারও কোনো জবাবদিহি নেই। ব্যাংকের যেমন জবাবদিহি নেই, মন্ত্রীদেরও জবাবদিহি নেই। একজনই ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কী করল? এসব টাকা পাচারের জবাবদিহি কে করবে? মন্ত্রী এখানে (সংসদে) থাকেন না। কোন মন্ত্রীর কী দায়িত্ব সেটাও জানি না। কে কী কাজ করেন এরও কোনো জবাবদিহি নেই। সবাই শুধু প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দেন। সবই যদি প্রধানমন্ত্রী করবেন তাহলে আপনারা আছেন কেন?’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তিনি ইফতারের টাকা বাঁচানোর জন্য সেটা নিষেধ করেছেন। কিন্তু ইফতারে আর কী যেত, এখানে হয়তো ১০০ কোটি টাকা যেত। কিন্তু ব্যাংকের ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে আমেরিকায় পালালেন আমজাদ সাহেব।’ এ সময় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন। তিনি পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক বাড়ি কিনে বসবাস করছেন। তিনি একা এই কাজ করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত প্রতিটি ব্যাংকে অডিট করে। ১ হাজার কোটি টাকা তো এক দিনে নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কী করল?

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে ব্যাংকিং সেক্টর খুব শক্ত। সমস্ত ব্যাংক সেক্টর এখন অটোমেশন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত ইন্টারনাল অডিট করে, প্রতিটা ব্যাংকে অডিট করে। স্টক এক্সচেঞ্জে আজকে যে লেনদেন হবে, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ জানবে কার কত বাকি আছে। তিন শ বাকি থাকলে তার পরদিন ক্রেডিট করতে দেবে না। আর এখানে ১ হাজার কোটি টাকা, এইটা তো এক দিনে নেয় নাই। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন, তারা কী করল?’ তিনি আরও বলেন, মনে করতে হবে যে শর্ষের মধ্যে ভূত আছে। সবাই যে এর সঙ্গে জড়িত, আমরা সে কথা বলতে পারব না। কারণ অর্থমন্ত্রী এখানে কখনোই থাকেন না। তিনি কোনো কথাই তো শুনতে চান না। আজ পর্যন্ত এই যে পত্রিকায় বড় বড় হেডিং, সেগুলো পড়তে থাকলে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর তরফ থেকে বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসে নাই। কারণ তারা জানেন ১ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। এখানে যদি ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে হয় তাহলে নড়েচড়ে বসে। ১০ হাজার কোটি টাকা হলে আরেকটু নড়েচড়ে বসে। এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে কাদের টাকা। এইটা তো এই দেশের জনগণের টাকা। ব্যাংকের মালিকরা তো জনগণ।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের লাইসেন্স দেন। সেটা কীভাবে চলবে তা ঠিক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ। তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। কেন জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, কে দায়ী এসবের জন্য? আজ ব্যাংকের যেমন জবাবদিহি নেই, মন্ত্রীদেরও জবাবদিহি নেই। কোথাও জবাবদিহি না থাকলে দেশ কীভাবে চলবে? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী লাইসেন্স দেন ঠিকই, তার অর্থ এই নয় যে, লাইসেন্স একটা কামান, দিয়ে দিলাম, যাকে ইচ্ছা তাকে মারো। জনগণের টাকাটা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এই ব্যাংকগুলো এখন পারিবারিক ব্যাংক হয়ে গেছে। এগুলো জনগণের ব্যাংক নাই। আমরা টাকা রাখি ঠিকই কিন্তু ওই ব্যাংকের মালিকদের চাকর-বাকরের যদি অসুখ হয় সিঙ্গাপুর চলে যাবে, ব্যাংকক চলে যাবে চিকিৎসার জন্য। এ সময় এসব তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।

বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতির সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বিরাট, লম্বা-চওড়া বিবৃতি শোনালেন, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, তিনি নিজে দিন-রাত পরিশ্রম করে আগুন নিভিয়েছেন। আসলে আগুন নেভাননি, আগুন আজও জ্বলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারে পানি ছিটিয়েছে। পানি পড়তে পড়তে কিছু আর থাকে না। ওটা অক্সিজেন হয়ে যায়। কোনোরকমে তারা গিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স রক্ষা করতে পেরেছেন। একটা দোকানদারও রক্ষা পায়নি। এটা হলো আসল কথা। আপনাদের শত চেষ্টার পরও কোনো দোকান রক্ষা করতে পারেননি। আর যত বেশি লোকজন গেছে, তত বেশি লুটপাট হয়েছে। এটা স্বীকার করেন না কেন। আগে ব্যবস্থা নিলে লুটপাট হতো না। আপনি বিরাট এক ফিরিস্তি দিয়েছেন কিন্তু মানুষ রক্ষা পায়নি। অর্থাৎ চিকিৎসা ভালো হয়েছে কিন্তু রোগী মারা গেছে।’

মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মন্ত্রীরা একেক সময় একেক কথা বলেন। আমরা একটা সংবাদ পেলাম, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে তিনি রাজনীতি চর্চা করতে পারবেন। আরেক মন্ত্রী বললেন, তিনি (খালেদা জিয়া) শর্ত দিয়েছেন রাজনীতি করবেন না। আপনারা একেক সময় আইনের একেক ব্যাখ্যা দেন।’

অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত আগুনের ঘটনা ঘটছে। মোকাবিলায় প্রস্তুতির অবস্থা খারাপ। বঙ্গবাজারে হাজার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঢাকার ভিতর স্থাপনা অপরিকল্পিত। এখানে আগুন নেভানোর সুযোগ নেই। চুড়িপট্টি সরানোর কথা, সেটা এখনো হয়নি। যাদের এসব দেখার কথা তারা কী করছেন!’

সর্বশেষ খবর