শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগ্রহের কেন্দ্রে মোমেন ব্লিঙ্কেন বৈঠক

ওয়াশিংটনে বৈঠক ১০ এপ্রিল, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তা দেবে বাংলাদেশ

জুলকার নাইন

আগ্রহের কেন্দ্রে মোমেন ব্লিঙ্কেন বৈঠক

আসন্ন নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতার মধ্যেই ওয়াশিংটন সফরে গেলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পাঁচ দিনের সফরে গতকাল তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে এই সফরে ১০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে কূটনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মোমেন-ব্লিঙ্কেনের আসন্ন এ বৈঠক। অবশ্য ড. মোমেন এই সফরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রায় সব বিবৃতি, প্রতিবেদন ও বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে নিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া শুভেচ্ছাবাণীতেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারাও একাধিক সফরে এসে এ প্রসঙ্গে কথা বলে গেছেন। এ কারণে ওয়াশিংটনে মোমেন-ব্লিঙ্কেন বৈঠকেও আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ আসবে বলে মনে করছেন ঢাকার কূটনীতিকরা। গণতন্ত্র ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েই বৈঠকে উপস্থিত হচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, শ্রম অধিকারসহ বেশ কিছু এজেন্ডা। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু, রোহিঙ্গাসহ একাধিক বিষয়।

সফরে যাওয়ার দুই দিন আগেই এ নিয়ে খোলামেলা কথাও বলে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। অবশ্যই বলব আমরা খুব লাকি। কারণ আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুব একটা দাওয়াত দেন না, আমরা পর পর তিনবার তার দাওয়াত পেলাম। দাওয়াত আমি সানন্দে গ্রহণ করেছি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কী আলাপ হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমেরিকা একটি ইস্যু আমাদের কাছে প্রায়ই তুলে এবং সেটি হচ্ছে তারা চায় বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন হোক। অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারও তাই চাই, একটি স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আসলে আমেরিকার প্রধান মূল্যবোধ এবং আমাদের প্রধান মূল্যবোধ একই ধরনের। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র সমুন্নত করার জন্যই। সে কারণে আমাদের গণতন্ত্র শেখানোর প্রয়োজন নেই। এটা আমাদের অস্থিমজ্জায়। আমাদের রক্তে গণতন্ত্র। সরকার যে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী আমরা সেটা তাদের জানাব। মন্ত্রী বলেন, আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। আগে ভুয়া হতো। এখন যেন না হয়, সে জন্য আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। তারাই ইলেকশন করবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। সরকার অবশ্যই কমিশনকে সাহায্য করবে। আর শুধু সরকার সাহায্য করলে হবে না। জনগণ, সব রাজনৈতিক দল, মিডিয়া সবাইকেই সাহায্য করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সাহায্য ছাড়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব। কারও অন্য ধরনের কোনো চিন্তা থাকলে, তা ভুল চিন্তা। আমরা সংবিধান ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী। সরকারের চেষ্টা থাকবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন। ইতোমধ্যে সব দলকে নির্বাচনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করছি, তারা সরকারের ডাকে সাড়া দেবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন মহাসড়কের সঙ্গে আমেরিকা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। আর আমাদের সম্পর্কেরও উন্নতি হয়েছে। দুই বছর কভিডের জন্য আমাদের আনাগোনা কম ছিল। এখন তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু দেশ। তারা আমাদের বড় বিনিয়োগকারী দেশ। আমাদের অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকা একমাত্র দেশ, যারা করোনাকালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আমাদের ১০০ মিলিয়নের বেশি টিকা দিয়েছে। আমরা টিকা অন্য জায়গা থেকে কিনেছি। আর যুক্তরাষ্ট্র কেবল টিকা দেয়নি তারা তা পয়সা খরচ করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা আসার পর যে দেশ সবচেয়ে বেশি পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটি আমেরিকা। অন্যান্য অনেক দেশ প্রথমে ভালো অর্থ দিলেও পরে কমিয়ে ফেলেছে। তবে আমি সেই দেশে যাচ্ছি, এসব কাজের অবশ্যই প্রশংসা করব। আমাদের বাণিজ্য যেন বাড়ানো যায়, তা নিয়েও আলাপ হবে।

সর্বশেষ খবর