বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বর্ণ চোরাকারবারি গডফাদার দোলন পালিয়েছেন

বাজুস থেকে বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বর্ণ চোরাকারবারি গডফাদার দোলন পালিয়েছেন

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সোনা চোরাকারবারিদের গডফাদার এনামুল হক খান দোলন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার সকালে একটি ফ্লাইটে কুখ্যাত এই চোরাকারবারি ব্যাংককে পাড়ি জমিয়েছেন। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডে সোনা চোরাচালান চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় দেশটিতে অবস্থান করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করলেও ব্যাংককে আত্মগোপনে থাকা দোলনকে খুঁজছে থাই পুলিশ। এদিকে এনামুল হক দোলনকে বাজুস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় দোলনের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাজুস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি এনামুল হক খান দোলনকে বাজুসের সব পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সোনা চোরাচালানের মূল হোতা দোলন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না সোনা পাচার। শুল্ক গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারির মধ্যেও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে সোনা। বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে সোনা পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। চোরাচালানে জড়িত সোনা ব্যবসায়ী দোলনের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সোনা চোরাচালান অব্যাহত রেখেছেন দোলন। তার মালিকানাধীন ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স ও শারমিন জুয়েলার্সের আড়ালে তিনি সোনা পাচার সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দোলনের সোনা চোরাচালানের বিষয়ে সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরই তিনি ব্যাংকক পালিয়েছেন। থাইল্যান্ডের সোনা চোরাচালান চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দোলনকে থাই পুলিশ খুঁজছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। শুল্ক গোয়েন্দারা মাঝেমধ্যে চোরাচালানের সোনা জব্দ করছেন। বাহকদের তুলে দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু চোরাচালানের মূল হোতা এনামুল হক খান অধরাই থেকে যাচ্ছেন। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরদারিতে রয়েছেন সোনা চোরাকারবারিদের গডফাদার দোলন। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, এনামুল হক খান দোলন দুবাই ও সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক সিন্ডিকেটের সহায়তায় দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী বিভিন্ন যাত্রীর মাধ্যমে সোনা ও অলংকার দেশে পাঠান। বিধিবহির্ভূতভাবে মূল্য পরিশোধসহ বিদেশে অর্থ পাচার করেন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে এনামুল হক খান দোলনের মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে দুবাইয়ের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তার বিরুদ্ধে দুবাইভিত্তিক সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে দুবাইয়ের অর্থ পাচার প্রতিরোধ ইউনিট। চোরাচালানের রহস্য উন্মোচনের জন্য দোলনের কাছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মজুদ সব স্বর্ণের হিসাব নিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন তিনি অবৈধ কারবার চালিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল না। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দেশে-বিদেশে অন্তত অর্ধশতাধিক গডফাদার চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এসব গডফাদারকে শনাক্ত ও এদের পরিচয় বের করা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ও অনেক গডফাদার দেশের বাইরে থাকার কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। অবৈধভাবে আসা সোনার টাকা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

সর্বশেষ খবর