বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রমজানের শেষ দশকের তাৎপর্য

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রমজানের শেষ দশকের তাৎপর্য

মাহে রমজান শুরু হতে না হতেই প্রায় শেষ পর্যায়ে। কথায় আছে, ভালো সময় যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। শুরু হয়ে গেল নাজাতের শেষ দশক বা জাহান্নাম হতে মুক্তির দশক। এই বরকতময় সময়ে বান্দা নিজ পাপের বোঝা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে তাঁর নৈকট্যতা হাসিল করবে। এ জন্য আমাদের মাঝে প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে মাহে রমজানের আগমন ঘটে। রমজানের শেষ দশক জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়ার সময়। হাদিসের ভাষায়- ‘ইতকুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের আর তৃতীয় দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির।’ (মিশকাত) শেষ দশক সত্যিই বড় তাৎপর্যপূর্ণ। এই দশকে বেজোড় রাতগুলোতে লাইতুল কদর : ইবাদতের মাধ্যমে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই এটা (কোরআন) শবেকদরে নাজিল করেছি। আপনি কি জানেন শবেকদর কী? শবেকদর ১ হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। সে রাতে শান্তি ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত (বহাল থাকে।)’ (সুরা কদর : ১-৫) অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি এই কোরআন নাজিল করেছি এক মুবারকময় রাতে।’ (সুরা দুখান : ৩) এখানে মুবারকময় রাত দ্বারা অনেক মুফাসসিরিনে কেরাম শবেকদর উদ্দেশ্য বলে তাফসির করেছেন। অর্থাৎ এই রাতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কিতাব পবিত্র কোরআন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়। বোঝা গেল এই রাতটি সর্বদিক থেকে ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তার ইতিপূর্বের সব (সগিরা ছোট) গুনাহ মাফ করেন।’ অপর হাদিসে আরও এসেছে, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমজানের শেষ দশকে হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান কর।’ (বুখারি : ১৯০১; মুসলিম : ৭৬০) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এই সময়ে ইবাদত অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দিতেন এবং পরিবারের লোকদের উৎসাহ দিতেন। এই ফজিলতপূর্ণ রাত এই শেষ দশকে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হাদিসে আরও এসেছে- ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত তালাশ কর।’ (বুখারি : ২০১৭) শেষ দশক তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার জন্য ইতিকাফের গুরুত্ব অনেক। ‘রসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। যত দিন না আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেছেন তত দিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি : ২০২৫) ইতিকাফ করার উদ্দেশ্যই হলো- দুনিয়াবি সব ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে একনিষ্ঠতার সহিত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য তাঁর ইবাদতে মগ্ন হওয়া এবং মাওলাপাকের দরবারে পড়ে থাকা। এ উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে যে কোনো মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফের আরও অনেক ফজিলত রয়েছে। ইতিকাফকারী সর্বদা মসজিদে অবস্থান করার কারণে শবেকদরের ফজিলত লাভ করতে পারে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থাকে। এ সময় আল্লাহপাক বহু গোনাহগার জাহান্নামিকে নাজাত দিয়ে থাকেন। গোনাহগারদের পাপ পোচন করে থাকেন। হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাত আসে তখন বিতাড়িত শয়তান ও দুষ্টু জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, একজন ঘোষক ঘোষণা দিতে থাকেন- হে সৎকর্মশীল! অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মশীল! থামো। মহান আল্লাহ রমজানের প্রতি রাতে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪২) ঈদের রাতে আল্লাহতায়ালা আরও দ্বিগুণসংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করেন। জাহান্নামের শাস্তি ভয়াবহ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বস্তুত যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের কাছে অপরাধী হয়ে আসবে, তার জন্য আছে জাহান্নাম, যার ভিতরে সে মরবেও না বাঁচবেও না।’ (সুরা ত্বহা : ৭৪) মোটকথা রমজানের শেষ দশকের তাৎপর্য অনেক। তাই এখন থেকে সজাগ হতে হবে। যে সময়টা আছে তা কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই রমজান মাস আমাদের জন্য সার্থক হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

সর্বশেষ খবর