বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্যায় যারা করেছে তারা শাস্তি পাবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্যায় যারা করেছে তারা শাস্তি পাবে : প্রধানমন্ত্রী

জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক সদস্যদের হত্যাকান্ড এবং বিগত বছরগুলোতে অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অন্যায় যারা করেছে, তারা শাস্তি পাবে।

গতকাল গণভবনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে নিহত সামরিক সদস্যদের পরিবার, বিগত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে অগ্নিদগ্ধ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। অগ্নিসন্ত্রাস ও জিয়ার আমলে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমিও আপনাদের মতো একজন। আমিও একদিন শুনলাম আমার কেউ নেই। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম, এতিম হয়ে গেলাম। কী বর্বরভাবে আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে হারালাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনী ও আর্মি কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে (তারা)। আমার গ্রামে একজন লুৎফাকে পেয়েছিলাম। আমি তার ছেলে মেয়েদের দেখতাম। তারপর থেকে অনেক চেষ্টা করেছিলাম এরকম সবার নাম জোগাড় করতে। স্বাভাবিকভাবে শুরুতে তারা খুব কষ্ট পাচ্ছিল। পরে আস্তে আস্তে আমরা নামগুলো পাই। তিনি বলেন, কী বর্বরতা ১৯৭৫ সালের পর। প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আমার ভাই, আত্মীয় স্বজনকে মারল, এরপর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করল। এরপর থেকে বারবার সেনাবাহিনীতে- মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করল। শুধু তাই নয়, আমাদের আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীকে হত্যা করল। যখন আমি অপজিশনে ছিলাম এমন দিন নেই, যেদিন লাশ টানতে হয়নি। আমাদের এত নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, তারপরও কী করে এদের পাশে লোক থাকে? আমি এটা বুঝে উঠতে পারি না। অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জীবন্ত মানুষকে কীভাবে পোড়ানো যায় এ রকম প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, এদের কোনো অপরাধ নাই। হ্যাঁ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মারছে। যারা পলিটিক্স করছে তাদের মারছে কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর যে জুলুম অত্যাচার আবার এখন আপনারা দেখেন মার্কেটে আগুন হঠাৎ করে যেন আগুন লাগাটা বেড়ে গেল? তারপরও আমার মনে হঠাৎ সন্দেহ হলো এটাও কি সেই নাশকতা নাকি? যারা জীবন্ত মানুষকে গাড়িতে আগুন দিয়ে, বাসে আগুন দিয়ে রিকশায় আগুন দিয়ে পোড়াতে পারে, এরা মানুষের ক্ষতি করাটাই জানে? ঈদের সময় হয়তো মানুষ একটু ব্যবসা বাণিজ্য করবে, হয়তো সেই পথটাও বন্ধ করে দিতে চায়। আমার তো মনে হয় এখানেও কোনো একটা ঘটনা আছে? তিনি আরও বলেন, আমি এই টুকুই বলতে পারি, যারা এই আপনজন হারিয়ে কষ্ট করে বড় হচ্ছেন, আপনাদের স্বান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। কিন্তু আমিও আপনাদের মতো একজন। বিদেশে অসহায় বোনকে নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে, হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার কেউ নেই। ছয় বছর বিদেশে রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে আমাদের, আমরা আপনাদের কষ্টটা বুঝি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনের পর দিন ফাঁসির কাহিনি এটা আমরা বিদেশে থেকেই এই খবরগুলো শুনতাম। কেন্দ্রীয় কারাগারে নেতাদের পর্যন্ত হত্যা করল। কোনো অপরাধ নেই, জানেও না কার কি অপরাধ। ধরে নিয়ে ফাঁসি দেওয়া। সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন বর্বরতা চালিয়েছিল। এই বিএনপি জামায়াতও ঠিক একই বর্বরতা চালিয়েছে। জিয়াউর রহমান হাসতে হাসতে নাকি মানুষের ফাঁসির রায় লিখত। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বিচারের রায় বের হয়েছে পরে। কী জুলুম, কী অত্যাচার, কী অন্যায়! ৩৫ বছর লেগেছে আমার বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। কারণ আইন করে দিয়েছিল। আমি দেশে ফিরে এসেছি, আমার কোনো অধিকার নেই আমি মামলা করতে পারব না, বিচার করতে পারব না। খুনিদের এভাবে রেহাই দেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারে সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে তারপর বিচার করতে গেছি সেখানেও তো কত বাধা। জজ সাহেবরা রায় দিতে যেতে পারে না বোমা মারে, হরতাল ডাকে। অনেক জজ সাহেব বিব্রত বোধ করেন। এটাও আমাকে দেখতে হয়েছে। যেখানে এতগুলো মানুষ হত্যা হলো। তার বিচারের রায়টা দিতেও তারা লজ্জাবোধ করেন! সরকারপ্রধান বলেন, আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। কারণ আমি তো একই কষ্ট পেয়েছি। যতটুকু পারি, আমার তরফ থেকে আমি করে যাব। আর অন্তত এখন এই জিনিসতো হারিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৭৭ সালে যাদের হত্যা করল বা ৭৫ সালের পর থেকে যাদের হত্যা করেছে, এটা তো মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। এটা যে আজকে মানুষের সামনে আসছে, জিয়াউর রহমান কী অপরাধ করে গেছে। জিয়াও যেমন করল, তার বউও করল তারপর আর ছেলেরা মিলে অগ্নিসন্ত্রাস। তারা তো এ দেশের কোনো মঙ্গল চায় না। এ দেশের কোনো ভালো ওরা চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে গেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সেই কাজটাই আমার কাজ হিসেবে নিয়েছি। আর সেই সঙ্গে যারা এভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, আমি আমার সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আছি আপনাদের পাশে। আপনারও তো আমার সমব্যথায় ব্যথী এই টুকু বলতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, অন্যায় যারা করেছে, তারা কিন্তু শাস্তি পাবে। শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে, পাবে। আরও যারা বাকি আছে সেটা (বিচার) আমরা অবশ্যই করব। এরা যে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার একটাই চেষ্টা এদেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে যখন মানুষ ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে, সেই সময় আবার অগ্নিসন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করা। এটি যারা করে, এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আল্লাহ সহ্য করবে না।

পরে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজন ও অগ্নিদগ্ধদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের ঈদ উপহার দেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ড এবং বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে আলাদা দুটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোহবান গোলাপ এমপির পরিচালনায় ১৯৭৭ সালে অন্যায়ভাবে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের সহধর্মিণী নুরুন্নাহার বেগম, তাঁর সন্তান নূরে আলম, ফাঁসিতে দ-প্রাপ্ত সার্জেন্ট মোশরাফুল আলমের কন্যা মাকসুদা পারভীন রিমনা অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেন। ২০১৩ সালে বোমা হামলায় দুই হাত হারানো এস আই মো. মকবুল হোসেন এবং ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমা হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মুখ বিকৃত হওয়া সালাউদ্দিন ভূঁইয়া অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর