বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইমান বৃদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

ইমান বৃদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন

একজন প্রকৃত মুমিন সার্বক্ষণিক ধ্যান ও সাধনা করতে থাকেন কীভাবে ইমান বৃদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এর জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। ছুটে যান হারামাইন শরিফাইনে। দিনরাত ইবাদতে মগ্ন থাকেন। মাহে রমজানে পবিত্র কোরআন খতমের পর খতম দিতে থাকেন। শবেকদরে রাত জেগে ইবাদত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকেন। এসব কিছুর উদ্দেশ্য শুধু ইমান বৃদ্ধি করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা। এর জন্য সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহেদিন, সালফে সালেহিন ও হক্কানি আউলিয়ায়ে কেরামের জীবন ও আমল সামনে রাখা যেতে পারে। তাঁরা কীভাবে নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণ করে ইমান বৃদ্ধি করেছেন ও আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করেছেন। ইমান বৃদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অনেক পদ্ধতি আছে যার দ্বারা ইমান বৃদ্ধি পায় ও আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। যেমন

* দীনি ইলম অন্বেষণ করা, দীনি ইলম অন্বেষণের জন্য প্রয়োজন প্রথমে নিয়ত ঠিক করা। সব কাজের ফলাফল নিয়ত হিসেবে হয়ে থাকে। ব্যক্তি যেমন নিয়ত করবে তেমন ফল পাবে। * দীনি ইলম শিক্ষা করার প্রতি যত্নবান হওয়া এবং মুহব্বতের সঙ্গে দীনি ইলম শিক্ষা করা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তো আল্লাহকে বেশি ভয় করে থাকে।’ (সুরা ফাতির : ২৮)

* ইহ-পরজগতে আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা। এর দ্বারা চিন্তাকারীর ইমান বৃদ্ধি পায় ও আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়।

* অর্থসহ কোরআনের অধিক তেলাওয়াত করা। যদিও কোরআনের তেলাওয়াত অর্থ না বুঝে করলেও প্রতি হরফে ১০ নেকি তেলাওয়াতকারীর আমলে লেখা হয়। কিন্তু অর্থ বুঝে পড়লে আল্লাহর ওপর ইয়াকিন বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা ইমানদার তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম তখন তাদের ইমান বেড়ে যায়। এবং তারা স্বীয় পরোয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।’ (সুরা আনফাল : ২)

* আল্লাহর সিফাতি বা গুণবাচক নামগুলো বেশি বেশি পড়া। সব সময় স্মরণে রাখা। অনেক ওলামায়ে কেরাম আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোকে ইসমে আজম বলেছেন। তাঁরা এও বলেছেন, ইসমে আজম পড়ে দোয়া করলে ওই দোয়া কবুল হয়।

* প্রিয়নবী (সা.)-এর জীবনী ও সিরাত অধ্যয়ন এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

* সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহেদিনসহ আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনী পাঠ এবং তা থেকে নসিহত ও উপদেশ হাসিল করা।

* অধিক ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা, আল্লাহ সামর্থ্য দিলে ফরজ হজ আদায়ের পর মাঝে মাঝে ওমরাহের উদ্দেশ্যে হারামাইন শরিফাইনে যাওয়া, দুই পবিত্র হেরেমে মন ভরে ইবাদত করা, দোয়া করা। প্রিয় নবীজির স্মৃতিগুলো স্বচোখে দেখা। বেশি বেশি নেক আমল করা। জিকির-আজকার, তওবা- ইস্তিগফার এবং অধিক হারে দরুদ পাঠ করা।

* সর্বদা নিজের প্রতিপালক রব্বুল আলামিনের ভয় মনে-প্রাণে রাখা। তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা, সব আশা-আকাক্সক্ষা পেশ করা, তাঁর ওপর ভরসা রাখা, তাঁর কাছে বিনীত হয়ে আবেদন-নিবেদন পেশ করা।

* আল্লাহর বান্দাদের প্রতি সদয় হওয়া ও নম্র অচরণ করা।

* সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী দীনি কাজের দাওয়াত দেওয়া।

* ভালো ও সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করা।

* মিথ্যা ও অশ্লীলতার পথ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা।

* সর্বদা চোখ, কান ও জবানের হেফাজত করা।

* মানুষের মুখাপেক্ষী না হয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া। সর্বদা আল্লাহর নেয়ামতের আশা করা।

* সত্যবাদী হওয়া। কেননা সত্যবাদিতা সৎপথ প্রদর্শন করে।

* দীনি বিষয়ে মুত্তাকি ও পরহেজগার ব্যক্তিদের দিকে দৃষ্টিপাত করা। আর দুনিয়াবি বিষয়ে নিজের থেকে কম পজিশনের লোকদের প্রতি লক্ষ করা।

* সাধ্য অনুযায়ী দানসদকা করা। তাহলে মনে-প্রাণে শান্তি ও আরাম অনুভব হবে।

মহান রব্বুল আলামিন আমাদের ইমান বৃদ্ধি ও তাঁর নৈকট্য হাসিলের আমলগুলো বেশি করার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর