বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাজধানী

মার্কেটে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ রমজানের হিসাব ধরলে আর দুই দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে ফাঁকা হতে শুরু করেছে যানজটময় রাজধানী। নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়ে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে পাড়ি জমিয়েছে গ্রামের বাড়ি। আরও দুই দিনে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফাঁকা রাজধানীসহ সারা দেশে কোথাও যাতে অপরাধ সংঘটিত না হতে পারে, সেজন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা, মার্কেটসহ সব জায়গায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। একের পর এক অগ্নিকান্ডের কারণে এবার বিভিন্ন মার্কেটে থাকছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। রাজধানীর ঈদের জামাত ঘিরেও নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। ঈদের ছুটিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে রাজধানীতে মোবাইল প্যাট্রোল, ফুট প্যাট্রোল ও চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব। পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, সরকারি অফিস, বাসা, অ্যাপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা ও প্রাইভেট নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে আগেই বলা হয়েছিল। গতকাল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে কোনো হুমকি নেই। এর পরও গোটা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আর ফাঁকা ঢাকায় থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। ঈদের ছুটিতে যাত্রা নিরাপদ করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফাঁকা বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র নিকটাত্মীয়ের কাছে রেখে ঈদে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন আইজিপি। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এই প্রতিবেদককে বলেন, ঈদে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। মার্কেটের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আর বাসাবাড়ি, দোকানপাটের নিরাপত্তার জন্য ফুট প্যাট্রোলিং, গাড়ি প্যাট্রোলিং, ডিবি, সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ফাঁকা বাসায় নগদ টাক, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র না রাখার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সূত্র জানান, বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে প্রতি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। ঈদের ছুটিতে রাজধানীর মার্কেট, বিপণিবিতান ও ফ্ল্যাটবাড়ির ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি নগরবাসীকেও ঘরের দরজা-জানালা ঠিকমতো বন্ধ করার বিষয়ে সচেতন করছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্তসংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। সারা দেশে নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, চেকপোস্ট এবং সিসিটিভি মনিটরিংসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারা দেশে ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষের বাসস্থান, কর্মস্থল, শপিং মলসহ অন্যান্য স্থানে চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে র‌্যাবের নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হবে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ফাঁকা রাজধানীতে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন। আশঙ্কা রয়েছে এমন এলাকাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। পাশাপাশি থাকছে টহল। ঈদে ঢাকায় কর্মরত বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য ডিউটিতে থাকবেন। তারা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং ও বাসাবাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের সচেতন করছেন। বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিকঠাক রাখছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, ঈদ মৌসুমের কারণে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মলম ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। এ ছাড়া সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালানোরও চেষ্টা করতে পারে। সেজন্য সাদা পোশাকে ও ভার্চুয়ালি নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সারা দেশের সব পুলিশ ইউনিটে টহল বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর