শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

৭০০ বাংলাদেশি সুদান থেকে ফিরতে আগ্রহী

লুটপাটের শিকার হয়েছেন অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশি, আতঙ্কিত অন্যরা, জেদ্দা হয়ে উদ্ধারের পরিকল্পনা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে থাকা সুদান থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি সুদান থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের আগামী শনিবার বা রবিবার জেদ্দায় নিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর সংঘাতে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হওয়া সুদানের রাজধানী খার্তুমে লুটপাটের শিকার হয়েছেন অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশি।

সুদানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জানান, সুদানে সংঘাত শুরু হওয়ার পর দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সুদানে আটকে পড়া ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরার আবেদন করেছেন।

সবাইকে একসঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সুদান থেকে প্রাথমিকভাবে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশিদের ফেরানোর দিন ঠিক করা হয়। তবে সুদান থেকে জেদ্দায় যাওয়ার জাহাজের শিডিউল কনফার্ম হয়নি। দু-এক দিন পেছাতে পারে। সুদানে চলমান সংঘাতে কোনো বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংঘাতের কারণে কোনো বাংলাদেশি হতাহত হয়নি। তবে বুধবার একটি ফ্যাক্টরিতে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। দূতাবাসে কেউ আশ্রয় নিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, দূতাবাসে কেউ আশ্রয় নেয়নি। সেখানে আমরাই থাকতে পারিনি।

দূতাবাস সূত্র জানান, স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে স্থানীয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ লোক লাঠি, দা, ছুরি নিয়ে খার্তুমের সোবা এলাকায় দেশটির তোলান ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় হামলা চালায়। তারা সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে টাকা, মুঠোফোন ও মূল্যবান জিনিসের পাশাপাশি রান্না করা খাবার ও হাঁড়িপাতিলও নিয়ে গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক তারিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০০ বাংলাদেশি ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের তালিকাও তৈরি হয়েছে। তবে এ সংখ্যা এখনই চূড়ান্ত নয়। জানা যায়, সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে রাজধানী খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাস আক্রান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানকার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসাও গুলির শিকার হয়েছে। খার্তুমের পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সেখানকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জাজিরা প্রদেশের মাদানি শহরে অবস্থান করছেন। তিনি সেখান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিতে কাজ করছেন। ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার। সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া লড়াইয়ে আটকে পড়েছেন ১২ শতাধিক বাংলাদেশি। এ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে শুধু বাংলাদেশি নয়, আটকা পড়েছেন বিভিন্ন দেশের হাজারো নাগরিক। সুদান থেকে বিভিন্ন দেশের ৯১ জন নাগরিককে উদ্ধার করে সৌদি আরব। সেখানে কজন বাংলাদেশি নাগরিকও ছিলেন। আফ্রিকার দেশ সুদানে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। অপর একটি সূত্র জানান, সুদানে অনেক অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। তারা অনেকেই ফিরতে আগ্রহী নন। কেননা সুদান থেকে একবার চলে এলে ফেরা সহজ হবে না। তাই অনেকেই দ্বিধায় রয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, সুদানের সেনাবাহিনী ও র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই অব্যাহত থাকায় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সুদান ছেড়ে গেছেন। এর পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও খার্তুম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়া খার্তুমে বাংলাদেশের লোকজনের মধ্যে দ্রুত সুদান ছাড়ার তাগিদ বাড়ছে। কারণ, খার্তুমে প্রতিনিয়ত যেভাবে একে অন্যের ওপর হামলা চালাচ্ছে, তাতে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটতে পারে।

সর্বশেষ খবর