শিরোনাম
শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

রামপুরা-ডেমরা উড়ালপথ নিয়ে দুই মেয়রের আপত্তি

খালে পিলার স্থাপনে জটিলতা

হাসান ইমন

রাজধানীর রামপুরা থেকে ডেমরা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৯.৫ কিমি হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়ালপথ)। নকশা অনুযায়ী উড়ালপথের রামপুরা থেকে মেরাদিয়া অংশের পিলারগুলো পড়েছে রামপুরা খালের পাড়ে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, খালের পাড়ে পিলার স্থাপন হলে খালের প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে; যার উদাহরণ হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন। বিজিএমইএ ভবন যেমন হাতিরঝিলের বিষফোঁড়া ছিল, তেমনি পিলারও হবে খালের বিষফোঁড়া। সহমত পোষণ করেছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়রও। এ জটিলতা নিরসনে সরেজমিনে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানালেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। তবে উড়ালপথের পিলার খালের প্রবাহে কোনো বাধা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, রামপুরা থেকে আমুলিয়া হয়ে ডেমরা পর্যন্ত সড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে। নির্মিতব্য সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কটির সাড়ে ৯ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। ভূমি সমান্তরালে থাকবে ৪ কিলোমিটার। সার্ভিস রোড, দুটি সেতু, চারটি ইন্টারচেঞ্জ, দুটি কালভার্ট, তিনটি ওভারপাস, প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোয় ফুটওভার ব্রিজ ও একটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। পুরো সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) ও চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি) এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। ২০২৬ সালে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার যানবাহন পারাপার হওয়ার আশা করছেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তবে নির্মাণকাজ শুরুর আগেই এ সড়কের উড়ালপথের জন্য পরিকল্পনা করা পিলার নিয়ে আপত্তি তুলেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঢাকা মহানগরে চলমান সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে ডিটিসিএর পরিচালনা পর্ষদ। এ কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গত সোমবার মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সমন্বয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, রামপুরা থেকে ডেমরা পর্যন্ত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর; যা কিছুদিন আগে একনেক থেকে পাস হয়েছে। এ প্রকল্পের অনেক পিলার বসবে রামপুরা খালে। আমরা হাতিরঝিলের জন্য বিজিএমইএ ভবন ভেঙেছি। অথচ একই কাজ হচ্ছে রামপুরা খালে। এ ছাড়া আলোচ্য এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‌্যাম্প রামপুরা ব্রিজে নামানোর প্রস্তাব রয়েছে। এমনিই তো ব্রিজের ওপরে প্রচণ্ড ট্রাফিক। তার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের সব পরিবহন এখানে নামিয়ে দেবে। তার মানে রামপুরা এলাকাটি যানজটে পরিণত হবে। মেয়র আতিকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এখানে উড়ালসড়কের প্রয়োজন দেখছি না। কারণ ২০০৮ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সড়কটির দুই পাশের অনেকাংশ জায়গা অধিগ্রহণ করেছে, যেখানে আট লেন সড়কসহ সার্ভিস লেন নির্মাণ করা যাবে। সড়কের এত জায়গা থাকতে ওপরে যেতে হবে কেন? এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সড়ক ও পরিবহন সচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, খাল ধ্বংস করে কোনো কিছুই নির্মাণ করা যাবে না। প্রয়োজনে খালের পাড়ে থাকা বাড়িঘর, জমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করেন। প্রয়োজনে কিছু টাকা বেশি যাবে, খালের কিছু করা যাবে না। তবে মেয়রদের আমন্ত্রণে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা দেখবেন তিনি। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালের পাড়ে পিলার নির্মাণ হলে খালের প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. এনামুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারগুলো রামপুরা খালের পাড়ে রাস্তা ঘেঁষে নির্মাণ হবে। যেগুলোয় খালে পানিপ্রবাহে কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ খালের পাশে সড়ক রয়েছে। আর সড়ক ঘেঁষে কিছু জায়গা আছে, সে স্থানে পিলার বসবে।

সর্বশেষ খবর