রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

গতি বাড়িয়ে উপকূলে মোখা

♦ জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা ♦ ১০ নম্বর বিপৎসংকেত ♦ দুই বিমানবন্দরে ফ্লাইট বন্ধ ♦ এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত ♦ আশ্রয়কেন্দ্রে বহু মানুষ ♦ অনেককে সরানো যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গতি বাড়িয়ে উপকূলে মোখা

টেকনাফে প্রস্তুত আশ্রয় কেন্দ্র -এএফপি

মহাবিপদ নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। মোখা গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় উপকূল থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। মোখার গতিবেগ বাড়তে থাকায় কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের স্থানীয় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাতাসের তীব্রতা নিয়ে আজ দুপুরনাগাদ ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের সন্ধ্যার বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আজ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে। কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় গতকাল সন্ধ্যা থেকেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার আগে আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। তবে যখন উপকূল অতিক্রম করবে, তখন এর শক্তি কিছুটা কমে আসবে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টির সবচেয়ে বেশি প্রভাব কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। মোখার প্রভাবে কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সেজন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে আজ ১৪ মে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে। গতকাল রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব দেখা গেছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ উপকূল এলাকা দিয়ে এগিয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। মহাবিপদ সংকেতের পাশাপাশি তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ এবং বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ এবং বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার-প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রেখেছি ও ঝড়টি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানি জমে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুতরাং সেই সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ (গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্ধ) সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা এ ধরনের ব্যবস্থা নিব ও নিচ্ছি।

প্রস্তুত নৌবাহিনীর ২১ জাহাজ, হেলিকপ্টার : ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সতর্ক করছে নৌবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া দুর্যোগ-পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত নৌবাহিনীর ২১ জাহাজ, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ)। সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে জাহাজগুলোকে ত্রাণসামগ্রীসহ প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপকূলীয় দুর্গত এলাকাগুলোতে মোতায়েনের জন্য নৌ কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পিরোজপুর : বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব গতকাল পিরোজপুরে পরিলক্ষিত হয়েছে। সকাল থেকে কিছু সময় আকাশ মেঘলা ছিল, মাঝে মাঝে আবার থেকেছে তীব্র রোদ। ফলে ভ্যাপসা গরমে জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। সব মিলিয়ে এখানে একটা গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করেছে। সময় যত ঘনিয়ে আসছিল ততই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছিল উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের নদীপাড়ের ৫ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গতকাল গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করেছে। সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বাতাসের চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। নদ-নদীর পানির উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট বৃদ্ধি পায়। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল ছিল। গভীর সমুদ্রে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে সব ট্রলার মৎস্য বন্দর মহিপুর আলীপার আড়ত ঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে ছিল।

বরগুনা : মোখার প্রভাবে বরগুনার নদ-নদীতে উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ। নাজুক বেড়িবাঁধের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : সুন্দরবন ঘেঁষা বলেশ্বর নদ সংলগ্ন বরগুনার পাথরঘাটায় চারটি স্থানে ৫৮৫ মিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় ওই বাঁধ থেকে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভোলা : ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ভোলায় গতকাল গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করেছে। বিকাল থেকেই চরফ্যাশন উপকূলের বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিসহ ঝড়ো বাতাস বইছিল ঢালচর, চরনিজাম, মনপুরা, কুকরি-মুকরি, চরপাতিলায়ায়। জেলা শহরে বৈরী আবহাওয়া না থাকলেও থমতমে অবস্থা বিরাজ করছিল।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার কাম আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা শ্যামনগরে ১৬৩টি ও আশাশুনি উপজেলার ১০৬টি আশ্রয় কেন্দ্র্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার কাম আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৪ লাখ মানুষের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে।

ফেনী : বেড়িবাঁধ না থাকায় ফেনীর গোটা উপকূলীয় এলাকা রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় গতকাল ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব ছিল না। অবশ্য সকাল থেকে সারা দিন রোদ আর মেঘের লুকোচুরি চলেছে। অভ্যন্তরীণ নদনদীর পানি কিছুটা বেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম : প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসন। এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় এবং পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোখার আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আগে ও পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলেছে প্রশাসন।

মোখার কারণে চট্টগ্রাম শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম আজ রাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা থেকে শনিবার ভোর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বরিশাল : মোখার প্রভাবে গতকাল মেঘলা আবহাওয়া এবং থেমে থেমে হালকা বাতাস বইছিল বরিশাল অঞ্চলে। ঘূর্ণিঝড় এবং এর প্রভাবে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং করেছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)। বন্ধ রাখা হয় সব ধরনের নৌযান চলাচল। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দুর্যোগকালীন সবাইকে সাইক্লোন শেল্টারে নিরাপদে আশ্রয় নিতে অনুরোধ করে জেলা প্রশাসন। সব উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও ত্রাণ মজুদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ঝালকাঠি : ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ঝালকাঠিতে গতকাল গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করেছে। সকাল থেকেই আকাশ ছেয়ে ছিল কালো মেঘে। জেলার সুগন্ধা, বিশখালী, হলতাসহ নদ-নদীগুলো ভয়ানক রূপ ধারণ করে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষজন।

রাঙামাটি : ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গতকাল থেকেই রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। এতে উৎকণ্ঠা দেখা দেয় স্থানীয়দের মধ্যে। তবে ঝুঁকিতে বসবসরতদের এরই মধ্যে সরিয়ে নিতে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। একই সঙ্গে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে নৌচলাচল বন্ধ রাখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন মো. মিজানুর রহমান।

ভোলা : ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে- এমন খবর পেয়ে মেঘনা নদী ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে নৌকাবাসী মানতা গোষ্ঠীর লোকজন।

ছয় বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত, চার বোর্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় ছয় শিক্ষা বোর্ডে আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন জেলাগুলোর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম আজ রবিবার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম কক্সবাজার বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল : অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গতকাল বেবিচক জানিয়েছে, শনিবার ও রবিবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহেল কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, এই দুই দিন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তবে, বাতিল ফ্লাইটগুলো কীভাবে সমন্বয় করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর