বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্রিকস মুদ্রা ব্যবহারে প্রস্তুত ৩০ দেশ

♦ হুমকিতে পড়বে ডলার-ইউরো ♦ চাইলে লেনদেন সম্ভব মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ঋণ পরিশোধ ও আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোয় বিশ্বের বহু দেশ ডলার সংকটে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এসব কারণে ডলারের বিকল্প চাইছে কিছু উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো। ইউয়ানের মজুদ আছে, চাইলে লেনদেন করা সম্ভব জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস দেশগুলোর সম্পর্ক টিকে থাকলে লেনদেন করা সম্ভব। ব্রিকস হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা-এই পাঁচটি দেশের আদ্যাক্ষর (ইংরেজি) দিয়ে গঠিত সংস্থা।

ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার, ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হার বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের ৩০টি দেশ ব্রিকস জোটে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ডলারের একচেটিয়ে আধিপত্য থেকে মুক্তি পেতে জোটটি চালু করতে যাওয়া নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে চায় দেশগুলো। তাই ব্রিকস শিগগিরই ব্রিকস প্লাস-এ রূপ নিতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত অনিল সুকলল। আগ্রহ দেখানো দেশগুলোকে ব্লকে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে চলতি বছরের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য ব্রিকস সামিটে। সুকলল নিশ্চিত করেছেন যে এক ডজনেরও বেশি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এ জোটের মূল সদস্য। জোটে যোগ দিতে আগ্রহী দেশের সংখ্যা বর্তমানে ২৫-এ এসে দাঁড়িয়েছে। এ দেশগুলো যোগ দিলে মোট ৩০টি দেশ ব্রিকস মুদ্রা চালু করতে পারে। তারা মার্কিন ডলারকে এড়িয়ে যাবে এবং বৈশ্বিক রিজার্ভ ব্যবস্থায় ডলার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনুসর বলেন, ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের সম্পর্ক যতটা মজবুত হবে লেনদেনে করা ততটা সহজ হবে। এসব দেশের মধ্যে টেকসই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারলে এটা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করাও চ্যালেঞ্জ। প্রতিবেদন বলছে, যদি দেশগুলো ডলার ব্যবহার না করে এবং একটি নতুন মুদ্রা দিয়ে লেনদেন শুরু করে তাহলে একক আধিপত্য হারাতে পারে ডলার। ডলার বিশ্বব্যাপী দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া যে দেশগুলো ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহী তাদের অনেকে আবার তেলসমৃদ্ধ দেশ! তাই এ জোট ইউরোপীয় দেশগুলোকে তেলের বিনিময়ে নতুন মুদ্রা দিয়ে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে। এতে ইউরো ও ডলারের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা বিশ্ববাণিজ্য বিশ্লেষকদের। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল কেবল নিজেরাই ইউয়ানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে রাজি, তা-ই নয়; বরং ব্রিকসে আরও বেশি লেনদেন স্থানীয় মুদ্রায় করার জন্যও তারা আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি আরও কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, তারা ইউয়ানে বাণিজ্য করতে চায়। এদের একটি আর্জেন্টিনা। ডলার-সংকটের মধ্যে থাকা লাতিন আমেরিকার এই দেশ ঘোষণা করেছে, চীনের সঙ্গে লেনদেনে ডলারের পরিবর্তে ইউয়ান ব্যবহার করা হবে। একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। অন্যদিকে তেল বিক্রিতে যাতে ইউয়ান ব্যবহার করা যায়, সে জন্য বেইজিং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। বৈশ্বিক জিডিপির এক চতুর্থাংশের অধিকারী ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বের ৪২ শতাংশ মানুষ এই পাঁচটি দেশে বাস করে। অর্থাৎ তাদের নিজেদেরই রয়েছে বিপুল সংখ্যক ভোক্তা। যদি এতগুলো দেশ ডলারের পরিবর্তে নতুন মুদ্রা দিয়ে আন্তসীমান্ত লেনদেন শুরু করে, তবে তা হবে মার্কিন ডলারের ওপর একটি বড় প্রত্যাঘাত। এতে বিশ্বব্যাপী দুর্বল হতে পারে ডলার এবং এর ঘাটতি পুনরুদ্ধার করার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘ব্রিকস মুদ্রা’ আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে দেশগুলো ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহী তারাও তেল সমৃদ্ধ দেশ। সুতরাং, এই জোট ইউরোপীয় দেশগুলোকে তেলের জন্য ডলারের পরিবর্তে নতুন মুদ্রা দিয়ে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২৫টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। যে দেশগুলো ব্রিকস জোটে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সেগুলো হলো- আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলারুশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সেনেগাল, সুদান, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, লেনদেনের পদ্ধতিগত কোনো বাধা নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তালিকাভুক্ত যে পাঁচটি মুদ্রা রয়েছে তার মধ্যে চীনের ইউয়ান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও ইউয়ান মজুদ আছে। চাইলেই লেনদেন করা যাবে।

সর্বশেষ খবর