শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফেসবুকে ফাঁদ পেতে জিম্মি, মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমির হোসেন (২৫) নামে এক যুবক ‘কষ্টের জীবন’ নামে একটি ফেসবুক আইডিতে অ্যাড হয়। ওই আইডি থেকে তাকে সমকামিতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর তাকে সাক্ষাৎ করতে ডাকা হয় গাজীপুরে। সে অনুযায়ী আমির গত বছর ১৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে আসেন। চক্রের সদস্যরা তাকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দেওয়া হয় সেপটিক ট্যাঙ্কে। ফেসবুকে সমকামিতার ফাঁদ পেতে অপহরণ ও নির্যাতন চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর এমনটি জানিয়েছেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন চক্রের প্রধান তারেক। প্রথমে আগ্রহী তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন। এরপর সাক্ষাতের জন্য গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ডেকে এনে জিম্মি করে আদায় করতেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে ব্ল্যাকমেলের হুমকি ও নির্যাতন করত তারেকের চক্র। দীর্ঘ তদন্তের পর বুধবার নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা তারেকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মোহাম্মদ হৃদয় আলী, আশরাফুল ইসলাম, রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু।

ডিসি মোর্শেদ বলেন, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গোপালপুর এলাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকায় আসেন আমির। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখানের আশকোনা মেডিকেল রোডে বড় বোন নূরনাহার বেগমের বাসায় ওঠেন তিনি। এরই মধ্যে তারেকের সঙ্গে আমির গাজীপুরে দেখা করতে গেলে তাকে জিম্মি করে চক্রটি। এরপর ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে ফোন করে তার মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। ওই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন দক্ষিণখান থানায় ওই দিনই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং ১৩ এপ্রিল অপহরণ মামলা দায়ের করেন। চক্রটিকে শনাক্ত করতে কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়।

পরবর্তী সময়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে। এ দুজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো অপহৃত আমিরের বস্তাবন্দি গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

ডিসি মোর্শেদ আরও বলেন, মূল হোতা তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামে একটি ফেক ফেসবুক আইডি ছিল। সেটি ব্যবহার করে তিনি নানা সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন। তার প্রস্তাবে রাজি হওয়া তরুণদের গাজীপুরের চৌরাস্তা, শ্রীপুর ও মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় সাক্ষাতের জন্য ডাকা হতো। এরপর মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিত তার চক্রের সদস্যরা। ঠিক এভাবেই আমিরকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে এনে জিম্মি করে হত্যা করেন তারেক ও সহযোগীরা।

সর্বশেষ খবর