শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

থানায় ব্যবসায়ীকে আটকে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নিল পুলিশ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকার আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার নামের এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনার বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছেন শরীয়তপুর পুলিশ সুপার সাইফুল হক। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্র জানায়, জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তার সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে গত ২১ মে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাইয়ের (যার আনুমানিক মূল্য ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা)  অভিযোগ এনে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় ২৩ মে মামলা দায়ের করেন শাহীন আলম। ওই মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী ঠান্ডু চোকদারের চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়।

ঠান্ডু চোকদার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে আসে। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান ঠান্ডু চোকদারকে ছিনতাই মামলার আসামি সাদ্দাম চোকদার, তার বাবা বাদশা চোকদার, বকুল চোকদার ও বকুল চোকদারের বাবা রশিদ চোকদারের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। বলা হয়, প্রয়োজনে নাওডোবা বাজারে থাকা ওই ব্যক্তিদের দুটি দোকান তাকে এর বিনিময়ে লিখে দেওয়া হবে। পুলিশের এমন কথায় ঠান্ডু রাজি না হওয়ায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। এক পর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তার চাচা রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোরে রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখার হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। পুলিশ মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখেন। আবু জাফর ঠান্ডু চোকদার বলেন, ছিনতাই মামলার বাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারী আমার চাচাত ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই দিন রাতেই বাড়ি থেকে পুলিশ আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন। আমার কাছ থেকে আমার চাচা বাদশা চোকদার, তার ছেলে সাদ্দাম চোকদার, আরেক চাচা রশিদ চোকদার ও তার ছেলে বকুল চোকদারের নাওডোবা বাজারে অবস্থিত দুটি দোকান ঘর ক্রয় করার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক ওসি  মোস্তাফিজুর রহমান নেন। শহীদুল ইসলাম নাম লিখে নেওয়া হয় ওই চেকে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে ২টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন তিনি ওই ৫টি চেক উদ্ধার করেছেন। এদিকে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের কাছে আসামির আত্মীয়কে নির্যাতন কওে চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে ‘আর কিছু বলতে’ রাজি হননি তিনি।  পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা এলাকার এক ব্যক্তি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

সর্বশেষ খবর