সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল। গতকাল রাজধানীর গুলশানে ইইউ অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউ পর্যবেক্ষকদল। বৈঠকের পর ড. মাহফুজ কবির সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল বর্তমান নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে। আমি তাদের বলেছি, এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্তি ও সহিংসতামুক্ত। নির্বাচনের আগে ইইউর উচিত একটি পর্যবেক্ষকদল পাঠানো। তিনি আরও বলেন, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি পর্যবেক্ষকদল পাঠানোর বিষয়েও আমাকে জিজ্ঞেস করেছে। আমি বলেছি, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে এ অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অল্প সংখ্যক সদস্য নিয়ে একটি দল পাঠাতে পারে।
এদিকে বৈঠকের পর অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান বলেন, মানবাধিকারকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে, মানবাধিকার সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটাই আমি প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছি। দুপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ইইউ কার্যালয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সুজন সম্পাদক জানান, ইইউ প্রতিনিধিদল তাদের (সুশীল সমাজ) অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। জবাবে তারা জানিয়েছেন, দুই দলের অনড় অবস্থান সংঘাতের দিকে নিতে পারে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করতে পারেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা দরকার। নির্বাচনের প্রক্রিয়া সঠিক হতে হবে বলেও মনে করেন তারা। তিনি বলেন, নির্বাচন মানে বিকল্প। ভোটার যেন সেখান থেকে বেছে নিতে পারে। ইসি যেন নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করে। তারা (ইইউ প্রতিনিধি) জানতে চায় বর্তমান যে অবস্থা বিরাজ করছে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক কি না। আমি বলেছি, দলগুলোর প্রতি আমার আহ্বান তারা যেন সমঝোতায় পৌঁছে। বর্তমান প্রক্রিয়া নিরপেক্ষতা তৈরি করে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গত ৮ জুলাই থেকে ঢাকা সফরে রয়েছে ইইউ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ঢাকায় অবস্থান করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ঢাকায় সফরকালে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তারা নির্বাচনী পরিবেশ যাচাই করছেন। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না প্রতিনিধিদল সে বিষয়ে সুপারিশ করবে। তাদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই ইইউ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ইইউতে লেবার পার্টির স্মারকলিপি : গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। গতকাল বিকালে গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যালয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ স্মারকলিপি পৌঁছে দেয়। এ সময় দলের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় বা স্থানীয় কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। একদলীয় সরকারের অধীনে একদলীয় নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন রাবার স্ট্যাম্পের ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, হিন্দুরত্ন রামকৃষ্ণ সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মিরাজুল ইসলাম ও মেজবাউল ইসলাম সজীব।
