বাংলাদেশে অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলের নেতাদের ওপর সহিংস আক্রমণের খবর যাচাই করার পর এ আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি। গতকাল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা বলেছেন, পুলিশ হামলা করার আগপর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ ছিলেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অন্তর্বর্তীকালীন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিংহ বলেন, ‘যেসব ভিডিও ও ছবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যাচাই করেছে, সেগুলো বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আলোকপাত করে। আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোরভাবে আইন মেনে চলে এবং নাগরিকদের বাক্?স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। মানুষের আরও শারীরিক ক্ষতি এড়াতে এবং সংকট যেন আরও না বাড়ে, সে কারণেই এটা করা দরকার।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষকরা এবং ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব বাংলাদেশের ওই বিক্ষোভের ৫৬টি ছবি ও ১৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছেন। পাশাপাশি ঘটনার নয়জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাঁরা। অ্যামনেস্টি বলেছে, হাসপাতালের আশপাশে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা যাবে না। কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের নির্দেশনায় বলা আছে- বয়োবৃদ্ধ, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, অসুস্থ ব্যক্তিসহ যাঁদের পক্ষে আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে যাওয়া কঠিন, তাঁদের কথা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশকে শক্তিপ্রয়োগের প্রভাব ন্যূনতম করতে হবে। স্মৃতি সিংহ বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, বাংলাদেশের পুলিশ হাসপাতালের ভিতরে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে, যার মধ্য দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক আইনকে তোয়াক্কা না করার বিষয়টি প্রকাশিত হচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক।
পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করার আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের : বাংলাদেশে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে সব রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন। একই সঙ্গে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়টির অবশ্যই দ্রুত তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানানো হয়। গতকাল কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিং নোট প্রকাশ করে। ব্রিফিংয়ে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেন, গত কয়েক মাসে বিরোধীদের বেশ কয়েকটি সমাবেশে সহিংসতা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ সেখানে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করেছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের ব্যক্তিদের প্রতিবাদকারীদের দমনে হাতুড়ি, লাঠি, ব্যাট, লোহার রডসহ নানা ধরনের বস্তু ব্যবহার করতে দেখা যায়। ব্রিফিং নোটে বলা হয়, এসব ঘটনায় বিরোধী দলের সমর্থকদের পাশাপাশি কিছু পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। জ্যেষ্ঠ বিরোধী নেতাদেরও প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাঁদের বাড়িতে অভিযানও চালানো হয়। সমাবেশের আগে ও সমাবেশকালে বিরোধী দলের শত শত নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র বলেন, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে এবং জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারচর্চার সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া তৃতীয় কোনো পক্ষ জনগণের সেই অধিকারকে দমন করতে চাইলে, তাদের অধিকার রক্ষায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আমরা পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, কেবল জরুরি প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রিতভাবে বল প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদি করতেই হয়, বৈধতা, সংযমের ভিত্তিতে এবং যৌক্তিক কারণ সাপেক্ষে তা করতে হবে। অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়টি অবশ্যই দ্রুত তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের প্রচারের সঙ্গে যুক্তদের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি; যা রাজনৈতিক বহুত্ববাদ এবং ভিন্নমত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি করে এবং সেটিকে উৎসাহিত করে।
