রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যাংক খাতে সংস্কার ভুল হয়েছে

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাতে সংস্কার ভুল হয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্বচ্ছ না হলে চুরি হবে ব্যাংক খাতে। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে যে সংস্কার হয়নি তা নয়। সংস্কার হয়েছে তবে সেটা ভুল সংস্কার। আশির দশকের শেষ দিকে যখন বেসরকারি খাতে ব্যাংকের যাত্রা হয় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ছিল খুবই পেশাদার এবং কঠোর। সেখান থেকে এখন অনেক দূরে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা ইচ্ছামতো ঋণ নিচ্ছেন। পরিশোধ করছেন না। সেই ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে দেদার। এতে ব্যাংকগুলোর অবস্থা দিন দিন খারাপই হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে। ড. সালেহ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ব্যাংকিং আলমানাক’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতা করছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য দেন ফাস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকিং আলমানাকের এডিটরিয়াল মেম্বার মো. নুরুল আমিন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. আবদুল বারী। ব্যাংকিং আলমানাক হচ্ছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সামগ্রিক তথ্যসংবলিত বার্ষিক একটি পুস্তক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অধ্যাপক এ এ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক সালাউদ্দিন আহমাদ বাবলু।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছেই। খেলাপি ঋণের বিদ্যমান পরিমাণের বাইরে বিরাট অঙ্কের ঋণ রাইট অফ করা হচ্ছে। যেটা ব্যালান্স শিটে অন্তর্ভুক্ত নয়। এতে খেলাপি ঋণ হিসেবে তা প্রকাশ করছে না ব্যাংকগুলো। আবার খেলাপি ঋণ বিভিন্ন মেয়াদে রি-শিডিউল করেছে। এখানেও সে ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। আমদানি-রপ্তানি নিয়েও তথ্যবিভ্রাট রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মধ্যে। সব দিক বিবেচনায় দেশের ব্যাংকিং খাত এখন ‘উল্টো রথে’।

নতুন ব্যাংক নিয়ে সাবেক এই গভর্নর বলেন, একটা ব্যাংক খোলা হবে আর শহরে কিছু শাখা দিয়ে চলবে, এটার দরকার নেই। তাদের প্রান্তিক পর্যায়ে শাখা খুলতে হবে। একটা সময় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হলে তাদের পরামর্শ দিয়েছি এ খাতের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে। কীভাবে চলতে হবে, তারা আমাদের দেবে। আমরাও তাদের প্রতিবেদন দেব। কিন্তু পরে ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত এলো রাজনৈতিকভাবে। এতে ব্যাংকে খেলাপি বাড়ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্বচ্ছ না হলে চুরি হবে ব্যাংক খাতে। তাদের অবশ্যই অন্যের কথায় চললে হবে না। এ ছাড়া দেশের ব্যাংক খাতের দুরবস্থার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর সমালোচনা করেন বক্তারা।

ওয়াহিদউদ্দিদ মাহমুদ বলেন, দেশে অনেক দুর্বল ব্যাংক আছে সেগুলো একত্র করা যায় কি না দেখতে হবে। জোর করে করতে গেলে অন্য বেসরকারি ব্যাংক এর দায় নেবে না। সরকারি ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির বোঝাটা সুদহারের যে ফারাক তা বেড়ে গিয়ে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবেই হোক সাহায্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে, সে ক্ষতি তো সারা দেশকেই কোনো না কোনোভাবে নিতে হয়। আশির দশকে যখন বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তখন যে ভুলটা করা হয়েছিল, এখনো সেই ভূল করা হচ্ছে। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বেসরকারি খাতের ব্যাংককে অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু যে নিয়মকানুন দরকার সেই নিয়মের কথা চিন্তা করিনি। সেজন্য তারা (বেসরকারি ব্যাংক শেয়ারধারী) বলেছিল ব্যাংক দিয়েছি টাকা নেওয়ার জন্য। সেই ভুল আবারও যেন না করি। কিছু বছর ধরে বলা হচ্ছে যে মুক্ত অর্থনীতির যুগে যে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে তো অধিগ্রহণ করতে পারে। কাজেই সেটা করাই যায়, ব্যাংকের শেয়ার কিনে মালিকানা দখল করা যায়। কিন্তু আমরা যে ভুলটা করছি বা করে ফেলছি সেটি হলো ব্যাংকের মতো একটা সংবেদনশীল খাতে কয়েকটি কারণে একটি পরিবারের হাতে মালিকানা চলে যাচ্ছে একাধিক ব্যাংকের। তবে অবশ্যই ব্যাংক খাত উন্নত হচ্ছে, ডিজিটাল হয়েছে এটাও ঠিক।

সর্বশেষ খবর