ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ থেকে লাশ গুমের আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে গ্রেফতার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার জবানিতে। বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তা উঠে আসে। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত শতভাগ বলা যাবে না সঞ্জীভা গার্ডেনসে উদ্ধার হওয়া মাংসই এমপি আনারের লাশের খন্ডাংশ। আদালত সূত্র জানিয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন শিমুল ভূঁইয়া। বিশেষ করে সঞ্জীভা গার্ডেনসকেই কেন ভাড়া করা হলো, কীভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সদস্যদের যুক্ত করা হয়, শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করা, লাশ গুমের বর্ণনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরের দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান আসামি শিমুলকে আদালতে হাজির করেন। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এমপি আনারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক। পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জানা গেছে, শিমুল ভূঁইয়া খুলনা জেলার ফুলতলা থানার দামোদর গ্রামের নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। এর আগে গত সোমবার এই মামলায় গ্রেফতার শিলাস্তি রহমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত মঙ্গলবার আমান ভূঁইয়ার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র বলছে, শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছান ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন। তার সঙ্গে কলকাতায় যান শিলাস্তি রহমান ও শিমুল ভূঁইয়া। তারা গিয়ে আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে (সঞ্জীভা গার্ডেনসে) ওঠেন। ওই ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন শিমুলের ভাতিজা তানভীর, তাদের সহযোগী জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী। খুনের আগে কলকাতায় নিউমার্কেট থেকে পলিথিন, চেয়ারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে চেয়ারে বেঁধে এমপি আনারের অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেলের মাধ্যমে টাকা হাতানোর পর খুন করা। কিন্তু চেতনানাশক বেশি প্রয়োগ করে ফেলায় সেই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। ১৩ মে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে মাংস ও হাড় আলাদা করার কথা স্বীকারও করেছেন শিমুল। লাশ গুম করতে মাংসের টুকরো দুটি টয়লেটের কমোড দিয়ে ফ্লাশ করা হয়। আর হাড় হাতিশাল খালে ফেলা হয়েছে। খুনের আগেই মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান ঢাকায় চলে আসেন বলেও জানিয়েছেন শিমুল।
যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত শতভাগ বলতে পারব না সঞ্জীভা গার্ডেনসে উদ্ধার হওয়া মাংসই এমপি আনারের লাশের খন্ডাংশ। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমপি আনারকে ভারতে হত্যা করা হয়েছে। আপনারাও শুনেছেন, আমরাও শুনেছি ভারতে লাশের খন্ডিত অংশ পাওয়া গেছে। এই নৃশংস হত্যাকান্ড যারা ঘটিয়েছেন তারা আমাদের কাছে গ্রেফতার রয়েছেন। তাদের কয়েকজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। নেপালে গ্রেফতার সিয়াম সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে। ভারত চাইবে অপরাধী তার দেশে নিয়ে যেতে। ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। ভারত যখন সিয়ামকে নেবে তখন আমরাও বলব আমাদেরও কিছু জিজ্ঞেস করার আছে। দুই দেশ মিলেই তদন্ত হচ্ছে। আশা করি দুই দেশ মিলেই তদন্তে একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত আসবে। প্রসঙ্গত, এমপি আনার ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এ তথ্য জানায়। এরপর শিমুল ভূঁইয়াসহ তিন আসামিকে গ্রেফতার করে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা এবং তার লাশ গুম করার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ।