সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ছুটির দিনেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রামে লংমার্চ ও জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা ৬টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে বিদ্যমান কোটার সংস্কারের এক দফা দাবি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা বড় একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে অবস্থান নেন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বাধা দিলে, বাধবে লড়াই’, ‘হাই কোর্ট না শাহবাগ, শাহবাগ-শাহবাগ’, ‘কোটা নাকি মেধা আগে, জবাব চাই শাহবাগে’, ‘১৮ এর পরিপত্র, বহাল করতে হবে’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’সহ নানা স্লোগান দেন। এ ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে স্লোগান দেন তারা। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, গতকাল হাই কোর্ট একটা আংশিক রায় দিয়েছে যে সরকার চাইলে কোটা সংস্কার করে আইন পাস করতে পারে। তাই সরকারকেই এই আইন পাস করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ভাই বোনদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পিছ পা হব না। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আবু বকর মজুমদার বলেন, শনিবার আমরা সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলার সমন্বয়কারীদের সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে প্রতিনিধি বৈঠক করব। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
রেললাইন অবরোধ : রাবি প্রতিনিধি জানান, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রেললাইন অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টেশন বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জড়ো হন শত শত শিক্ষার্থী। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে স্টেশন বাজারে রেললাইন অবরোধ করেন তারা। অবরোধে জাগরণী গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থীরা।জাবিতে মশাল মিছিল : জাবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, নতুন প্রশাসনিক ভবন, পরিবহন চত্বর ও মেয়েদের হল সংলগ্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটকে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সময় বক্তারা বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া পুলিশের হামলার বিচারের দাবির পাশাপাশি অতি দ্রুত কোটা সংস্কারের দাবি জানান।
চট্টগ্রামে লংমার্চ : চবি প্রতিনিধি জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামজুড়ে লংমার্চ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল নগরীর ষোলশহর স্টেশন থেকে এ লংমার্চ শুরু হয়। লংমার্চটি ২ নম্বর গেট থেকে প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, জিইউসির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), অধিভুক্ত কলেজ ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
জবিতে বিক্ষোভ : জবি প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরি সামনে থেকে মিছিল শুরু করেন তারা। মিছিলটি বাংলা বাজার, শাঁখারি বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।
ইবিতে বিক্ষোভ : ইবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তারা। গতকাল বিকাল ৪টায় বটতলা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেইনগেটের সামনে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে অবস্থান নেন।
বাকৃবিতে বিক্ষোভ : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কে আর মার্কেট হয়ে আবদুল জব্বার মোড়ে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে বৃষ্টির মাঝেই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি করেন।
শেকৃবিতে মিছিল : শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। গতকাল বেলা ৫টায় লাইব্রেরি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের সেকেন্ড গেট, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংযোগ সড়ক, আগারগাঁও, শিশুমেলা, কলেজগেট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল মোড়ে এসে শেষ হয়।
বগুড়া : নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে চলমান কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে শহরের সাতমাথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ সমাবেশ করা হয়। এ সময় কাল রবিবার সকালে বগুড়ায় বৃহত্তর ছাত্র সমাবেশ করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ-সুলতান কলেজ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
কুবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যমূলক কোটা নিরসনের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ হামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গতকাল শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলো হয়ে আনসার ক্যাম্প ঘুরে গোল চত্বরে এসে শেষ হয়।