খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে যান। প্রায় ২০ মিনিট তারা শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন। এ সময় তারা পাহাড়িদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিক্ষোভের আয়োজকদের অন্যতম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সতেজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। আমরা পাহাড়িরা বারবার বলে এসেছি পাহাড়ের সমস্যাকে জিইয়ে রাখার কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের ওপর এ ধরনের হামলা বারবার সংঘটিত হচ্ছে। আমরা চাই প্রথমেই খাগড়াছড়ির দীঘিনালাসহ রাঙামাটি এবং পুরো পাহাড়ে জুম্মদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হোক। সতেজ চাকমা আরও বলেন, মূলত পাহাড়ের আদিবাসীদের প্রান্তিক থেকে প্রান্তিক করার জন্যই এ ধরনের চেষ্টা সব সময় করা হয়েছে। কিন্তু এসব সংগঠনের মধ্যে আসলে কারও লাভ নেই। আমরা আশা করব, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং পাহাড়ের আদিবাসীদের সমস্যাকে গভীরভাবে অনুধাবন করে এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অন্যথায় পাহাড়ের জুম্ম ছাত্র সমাজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেই।
বিক্ষোভে পাপড়ি চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। হামলায় জড়িতদের বিচার ও পাহাড়ে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি আমরা। বিক্ষোভে নিপ্পন চাকমা বলেন, আমরা যখন আমাদের অধিকার আদায়ে কথা বলি, তখন আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হয়। আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নই। আমাদের ওপর আঘাত এলে অস্তিত্ব রক্ষায় আমরা বসে থাকব না। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালেদ মনসুর বলেন, পাহাড়ে হত্যার প্রতিবাদে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা ১০ মিনিটের মতো সেখানে ছিলেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। লারমা স্কয়ারে অন্তত ৬০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার সকালে চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয়। এতে পুড়ে যায় অন্তত ৬০টি দোকান।