রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তার সমাধান করবে বলে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার বিদায়ি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটস্কিকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা সৌজন্য সাক্ষাতে এলে রেলওয়ে, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে দেশটিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রদূত সিস্তিয়াগা ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে স্প্যানিশ প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে রাশিয়ার বিদায়ি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটস্কি এবং স্পেনের রাষ্ট্রদূত পৃথক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. আবুল হাসান মৃধা উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকালে মন্টিটস্কি রুশ ফেডারেশনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে তাঁর দায়িত্ব পালনের তিন বছরের বেশি ঘটনাবহুল সময়ের কথা স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং এ কেন্দ্রে আগামী বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে তাঁরা আশা করেন। প্রকল্পটি মূলত রাশিয়ার অর্থায়ন ও কারিগরি বা বিশেষজ্ঞ সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে।সাক্ষাতে তাঁরা বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রমের অনুসন্ধান কার্যক্রম, রাশিয়া থেকে গম ও সার রপ্তানি এবং রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে রাশিয়ার সহায়তা এবং বাংলাদেশে গম ও সার সরবরাহে রাশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রূপপুর প্রকল্পের অর্থ পরিশোধের বিষয়টি সমাধান করবে। তিনি বাংলাদেশে রাশিয়ার আরও বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। উভয় দেশের যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করব।
স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ : স্পেনকে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি রেলওয়ের জন্য সহযোগিতা, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোও উল্লেখ করেন। সৌজন্য সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত জানতে চান, সংস্কার উদ্যোগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তাঁর দেশ সমর্থন করতে পারে কি না। প্রধান উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে স্পেনের যে কোনো সমর্থনকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। তিনি বলেন, স্পেন আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সমর্থন করতে পারে। এটি এখানে আরও বিনিয়োগ আনতে পারে এবং আমাদের পোশাকপণ্যের আমদানি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। বর্তমানে স্পেনে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি কাজ করছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি নিয়োগে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা স্পেনের রানি সোফিয়াকে তাঁর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ সফরের সময় রানি সোফিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রিয় কিছু মুহূর্তের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি রানি সোফিয়াকে আবারও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রদূত আগামী বছরের ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই স্পেনে অনুষ্ঠেয় উন্নয়নের জন্য অর্থায়নসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশটিতে সফরের জন্য তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানান।