এলাকায় এমপি লীগ-ছেলে লীগ বানিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন হাবিবর রহমান। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের টানা তিনবারের এ সংসদ সদস্য ও তার ছেলে আসিফ ইকবাল সনি তদবির ও নিয়োগবাণিজ্য করে গড়েছেন শত কোটি টাকার সম্পদ। ১৫ বছরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নামে-বেনামে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। বিভিন্ন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, পুলিশের সাবেক এই এসপি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবনে পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব পালনকালে তার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সংসদ সদস্য বনে যান। পুত্র সনি হয়ে যান ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। শেরপুর ও ধুনট উপজেলার তদবির বাণিজ্যের শীর্ষে ছিলেন বাপ-ছেলে। টেন্ডারবাজিতেও করেছেন বাজিমাত। সরকারের নানা প্রকল্পে কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কামিয়েছেন অঢেল টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে পরিবারসহ আত্মগোপনে অভিযুক্ত হাবিবর রহমান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও নিহতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে হাবিবর তার স্ত্রীর বড় ভাইকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে ধুনট উপজেলা পরিষদে নিয়ে আসেন। ধুনটের চর এবং প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করার নামে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ এনে লুট করেছেন তিনি। ওই প্রকল্প কর্মকর্তা এখনো আছেন বহাল তবিয়তে।
হাবিবর ২০০৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ধুনটের ১০ ইউনিয়নে লক্ষাধিক বড় গাছ কেটে নেন। ধুনটে জালশুকায় আদি বাড়ির পাশে ৭০ বিঘা বিল-বাইশা দখল করে তার সঙ্গে ১৫০ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলেন বাবু পার্ক সিটি। ধুনট শহরে ২১ শতাংশ জায়গার ওপর বাণিজ্যিক ভবন, শেরপুরের ছনকায় ৫০ বিঘা জমির ওপর আসিফ ব্রিক ফিল্ড, শেরপুর শহরের দুবলাগাড়িতে ৩০ বিঘার ওপর নির্মাণ করেন বাগানবাড়ি ও হিমাগার। হলফনামায় দেখা যায়, হাবিবরের নামে ১০ বছর আগে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ৩৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজর ৯৪৮ টাকা। ১০ বছর আগে নগদ ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৫ টাকা, ব্যাংকে দেড় লাখ টাকা এবং বন্ড ও শেয়ারবাজারে ২৫ লাখ টাকা। পরে নগদ টাকার পরিমাণ ৫৪ গুণ বেড়েছে। সবশেষ হলফনামায় দেখা গেছে, ব্যাংকে জমা রয়েছে ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৭০৪ টাকা। বন্ড ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ৪০ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে তার নিজের কোনো গাড়ি ছিল না, চড়তেন স্ত্রীর গাড়িতে। পরে ৬৬ লাখ ২৩ হাজার টাকার দামি গাড়িতে চড়েন। আগে হাবিবরের লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল না। পরে বন্দুক ও পিস্তল সঙ্গে রাখতেন তিনি। ১০ বছর আগে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। পরে ঢাকার অদূরে সাভারে আরও একটি ফ্ল্যাটের মালিক হন তিনি। হাবিবরের স্ত্রী খাদিজা বেগমের সম্পদও ১০ বছরে প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে। ১০ বছর আগে নির্ভরশীলদের নামে জনতা ব্যাংকে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ ছিল। সবশেষ হলফনামায় হাবিবর তাঁর বর্তমান অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টাকা উল্লেখ করেছেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা বেগমের অস্থাবর সম্পদ ৬৯ লাখ ৬২ হাজার ৯২৫ টাকা। হাবিবরের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ বিঘা কৃষিজমি, ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৩ টাকা মূল্যের ঢাকার নিকুঞ্জে ফ্ল্যাট এবং সাভারে বিসিএস পুলিশ অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট। তার স্ত্রীর সম্পদ দেখানো হয় ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের সাড়ে ৩ বিঘা কৃষিজমি। তবে ২০০৮ সালের হলফনামায় স্ত্রীর কোনো কৃষিজমি ছিল না। ২০০৮ সালে হাবিবরের কোনো দায়দেনা না থাকলেও ৪৩ লাখ ৭ হাজার ১৯৮ টাকা দায় থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।