চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের গতকাল শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনামুখী পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করা হয়। পরে মৎস্য ভবন মোড়, কাকরাইল ও আশপাশে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ সময় পুলিশসহ আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন আহত হন। পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে আটক করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের মৎস্য ভবনের দিকে নিয়ে যায়।
এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। এ সময় তারা যমুনা ঘেরাও করবেন বলে ঘোষণা দেন। দুপুর ১২টায় কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
চাকরিতে পুনর্বহাল, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা আন্দোলন করছেন।
মারুফ সরকার নামে চাকরিচ্যুত এক বিডিআর সদস্যের ছেলে বলেন, পুলিশ তাদের পদযাত্রায় জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে তাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) সূত্র জানায়, কাকরাইল থেকে আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- শামছুল হক (৫৫) ও ইউনুছ আলী (৫৭)। রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ। তাই যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা পদযাত্রা করেন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে। পথে মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে যমুনার দিকে যেতে চাইলে তাদের কাকরাইল মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি যমুনায় পাঠানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের কাকরাইল মসজিদ থেকে সরে যেতে ১০ মিনিটের আলটিমেটাম দেন। সেই আহ্বানে তারা সাড়া না দেওয়ায় দুপুর সোয়া ১২টায় পুলিশ জলকামানের পানি ও কমপক্ষে ৬টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশসহ আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন আহত হন। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে আটকও করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের মৎস্য ভবনের দিকে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সেগুনবাগিচা, পল্টন, কাকরাইল এবং রমনা এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক সাবেক বিডিআর সদস্য বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের সৈনিক দিয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আর দোষ চাপানো হয়েছে নির্দোষ বিডিআর সদস্যদের ওপর। আমরা আমাদের দাবিতে অনড়। আমাদের দাবি না মানা হলে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আন্দোলনকারীরা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একদিকে ধ্বংস করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে, অন্যদিকে ধ্বংস করা হয়েছে বিডিআরকে। আমাদের চাকরি পুনর্বহাল না করা হলে আন্দোলন থেকে সরে যাব না। সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। পুলিশ জানায়, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলেও তারা না যাওয়ায় জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।