মার্কিন প্রশাসনের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দ্রুত এর সমাধান করতে না পারলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের রপ্তানি খাতের ওপর। তবে এ প্রসঙ্গে আলোচনার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। কেননা দেশটি ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য উপদেষ্টা এ মুহূর্তে ওয়াশিংটনে রয়েছেন এ বিষয়ে আলোচনার জন্য। দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা না হলে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশটির সঙ্গে শুধু এ শুল্ক ইস্যুই নয়, এর বাইরে আরও অনেক অশুল্ক বাধা রয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে টিকফা ও জিএসপি সুবিধাসংক্রান্ত চুক্তিগুলোর আলোচনাও এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এত বড় একটা ইস্যু আলোচনার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা ওয়াশিংটনে গেছেন অথচ সেখানে তিনি কোনো ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে নিয়ে যাননি। একেও দূরদর্শিতার এক ধরনের অভাব হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। কেননা এ ইস্যুটা সম্পর্কে যিনি ভালো জানেন তিনিই যদি সে বৈঠকে না থাকেন তাহলে সে বৈঠকের ফল কীভাবে আমাদের পক্ষে আসবে-এমন প্রশ্ন রেখেছেন একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। এর আগে এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের পর তা ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের আবেদন করা হয়। দেশটি তা গ্রহণও করে। কিন্তু এ ৯০ দিনে আমরা কার্যকর আলোচনা করতে পারলে হয়তো এখন পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর)। এ আলোচনা গতকাল ৯ জুলাই শুরু হয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প ৭ জুলাই ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বাংলাদেশ নতুন দফায় আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটার জন্য একটা কার্যকর আলোচনা দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে যাঁরা গেছেন তাঁরা কী নিয়ে গেছেন তা আমরা জানি না। আমরা তো আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম, কিন্তু বাণিজ্য উপদেষ্টা কী নিয়ে গেছেন তা জানি না।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বাধার চেয়ে অশুল্ক বাধাই বড় বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি আরও বলেন, ‘এই যে আমরা আমেরিকান কত শত পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করি যেমন ডেল-এর কম্পিউটার মালয়েশিয়া থেকে আসে। হংকং থেকে আইফোন আসে। এর বাইরে আরও বহু রকমের অ্যাকসেসরিজ আসে এগুলোর পরিসংখ্যান তো ইউএসটিআরকে দেওয়া হয়। এটার হিসাব যোগ করা হলে তো বাণিজ্য ঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে।’ এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৬২৬টি পণ্যে শুল্কছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয় জাতীয় বাজেটে। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার কথা জানায় সরকার। বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে। শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। সে সময় বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতো। তিন মাসের জন্য স্থগিত থাকা সিদ্ধান্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোমবার ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে দেশটি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের পলিসি যদি আমরা না জানতে পারি কীসের ভিত্তিতে তাহলে লবিস্ট নিয়োগ করব? আমাদের মধ্য থেকেও মানে বিজনেস কমিউনিটি থেকে এক-দুজনকে আস্থায় আনা উচিত। তাঁদের এনে আমাদের যেন আরও ভালো দর কষাকষি করা যায়। এখন এটা সরকারের বিষয়। সরকার যদি মনে করে যে না উনারা পারবে তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমরা চাই ভালো ফল।’ বিশ্বব্যাংক ঢাকার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশটি শুধু শুল্ক নিয়ে কথা বলেনি। তারা অশুল্ক বাধা, মেধাস্বত্ব (আইপি) অধিকার, ব্যবসা পরিচালনার সহজতা, দুর্নীতি হ্রাস এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আরও বিনিয়োগবান্ধব করার মতো ও সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-এ ইস্যুগুলো আলোচনায় কতটা গুরুত্ব পেয়েছে বা আমরা এগুলো উন্নয়নের জন্য কী ধরনের প্রস্তাব পেশ করেছি? তবে এ বিষয়গুলো তুলে ধরে একটা গোছালো প্রস্তুতি আমি দেখিনি। ফলে এখন একটা এমন বাধা এসে সামনে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের এক ধরনের বড় ধাক্কার মুখে ফেলে দিয়েছে।’