বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে এ শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য আমেরিকা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। মঙ্গলবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র জানান, এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো নতুন প্রস্তাব নিয়ে আবারও আলোচনা করেন বিএনপির হাইকমান্ড। তবে এবার ডকুমেন্টস বড় হওয়ায় আরও বিস্তারিত আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ ছাড়া যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন চায় বিএনপি। নেতৃবৃন্দ বলেন, কেন সরকার বাস্তবায়ন করছে না। এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বিএনপির যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। বিএনপি এটিকে ‘ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে দেখতে চায়। তবে এক নম্বরে মুক্তিযুদ্ধকে রাখার প্রস্তাব করেছে বিএনপি। বৈঠকে কয়েকজন নেতা অভিমত দেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে এমন কিছু প্রস্তাব বা কথা রয়েছে যা আলোচনায় আনারই প্রয়োজন ছিল না। এসব প্রস্তাব দেশের জনগণ মানবে না। তবে বিশদ আলোচনার পরই ভেবেচিন্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এজন্য গতকাল রাতেও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আবার বৈঠক করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে আমরা প্রথমেই মহান স্বাধীনতার বিষয়টি অ্যাড্রেস করেছি, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস, ১৯৯০ সালের সামরিক-স্বৈরশাসনবিরোধী ছাত্রদের যে গণ অভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্টের ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানকে আমরা উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করেছি। জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য বিএনপির প্রস্তাব দেওয়ার চার মাস পেরিয়েছে। অভুত্থানেরও প্রায় এক বছর চলছে। এ অবস্থায় সরকার কবে ঘোষণাপত্র জারি করবে তা এখনো জানায়নি।’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের রিপোর্ট পেশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন পদ্ধতি, নিম্নকক্ষ, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, নারীদের ১০০ আসনে কয়েকটি দলের সরাসরি ভোট নিয়ে আলোচনা হয়। তবে বিএনপি প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে। পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে নয়। কারণ এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জনগণ জানতে পারবে না তার এলাকার জনপ্রতিনিধি কে। তাহলে তারা কাকে ভোট দেবে? তখন বৈঠকে দুজন সদস্য বলেন, সংস্কার কমিশনে প্রতিদিনই একই ধরনের আলোচনা হচ্ছে। অনেক বিষয়ে বিএনপি ঐকমত্য হয়েছে। কমিশনের সব প্রস্তাবে যদি একমত পোষণ করতে হয় তাহলে আরেকটা বাকশাল হয়ে যাবে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো কেন সরকার বাস্তবায়ন করছে না। এটাও তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সূত্র জানান, সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য বিএনপির প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে, তার বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী বলেই বিএনপির প্রতিনিধিরা ধৈর্য ধরে আলোচনা শুনছেন এবং তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশনকে সহযোগিতা করছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা দেখিয়েছে বিএনপি। আমরা জাতীয় মূলনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি যে আমরা কোন বিষয়ে একমত।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে তারা আবারও আলোচনা করবে। আমরা আলোচনায় আগ্রহী।’
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এ বৈঠক শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষ হয় ১১টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।