ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ, প্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণ করতে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। গতকাল নির্বাচন ভবনে ‘ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন’ নামে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ধাপে বৈঠক করে। এদিকে একই দিন বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ছাড়াও ছিলেন যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মূসা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। বৈঠক শেষে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশন ইতিবাচক। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলটি ৫০ থেকে ১০০টির বেশি আসন পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। দলের সম্ভাব্য প্রতীক নিয়ে এক মন্তব্যে তিনি বলেছেন, সুখবর আসছে। আর দলকে শাপলা প্রতীক দিতে হবে। এ ছাড়া বিএনপি তলানির দিকে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জামায়াত-বিএনপিকে ভণ্ডামি না করার পরামর্শ দিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। সব আসনে জয়ের জন্য আমরা চেষ্টা করব। কিন্তু ইট কামস টু দ্য প্র্যাকটিক্যাল, আমরা বলেছিলাম যে আমাদের ১৫০টি আসন উইন করার এবং একদম কনফার্ম, এ রকম জেতার মতো সিচুয়েশন আছে। কিন্তু ৩০০ আসনে জয়ের জন্যই লড়ব ইনশাল্লাহ।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘প্রথমত আমাদের জন্য জুলাই-পররর্তী সময়ে একটি সুখবর আসছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় একটা পজিটিভ সাইনের দিকে যাচ্ছি এবং একটা সুখবর আসছে। প্রতীকের বিষয়ে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলার দাবি থেকে সরছে না দলটি।’ গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এনসিপি একীভূত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘দলের নাম এনসিপি থাকবে। এনসিপির প্রতীকেই থাকবে। অন্য দলের নাম, মার্কা ডিজলভ হবে এবং এনসিপির আন্ডারে আরও অনেক দল আসতেছে। আমরা বড় ধরনের একটা পার্টি করতে যাচ্ছি। এর ফলে অনেক দল, অনেক মত, অনেক ব্যানার ইনশাল্লাহ এনসিপির ব্যানারে চলে আসবে। এটা আমরা খুবই স্পষ্ট আমরা রেশনাল উচ্চকক্ষে পিয়ার আমরা নিম্নকক্ষে পিয়ার চাই না।’
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধনের কাজ গুছিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের পর যোগ্য দলগুলোর বিষয়ে আপত্তি রয়েছে কি না বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর টিকে থাকা ২২ দলের কেন্দ্রীয় ও মাঠ পযায়ে অস্তিত্ব, কমিটিসহ প্রাসঙ্গিক দলিলাদির সরেজমিন তদন্ত শেষ হয়েছে। আলোচনায় থাকা নতুন কিছু দল নিবন্ধন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক প্রসঙ্গে ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের আগে ভোটের পরিবেশ, ইসির প্রস্তুতি ও নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক টিম পাঠাবে কি না তা নিয়ে সার্বিক বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের ভোট ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, আইন শাখা, কারিগরি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত ইইউ প্রতিনিধিদলটি। গতকাল বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন টিম এবং ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যকার এ বৈঠক হয়। এরপর বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, ইইউ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ইসির সঙ্গেও বৈঠক করেছে। ইসির এ বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোটের আগে সারা দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ এবং অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নেওয়া পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়।