খুব শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেটা ১৫ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই করতে চায় কমিশন। এর মধ্যে রাজনৈতিক অনৈক্যের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে দলগুলোর সঙ্গে ৮ অক্টোবর আবারও বৈঠক হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নেরপ্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলো এক জায়গায় না এলে কমিশন একাধিক বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সরকারকে প্রস্তাব দেবে। এ ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন করা হতে পারে।
গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব তথ্য জানান। এদিন সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জুলাই সনদের বিষয়বস্তু এবং এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব এবং এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান সম্পর্কে সভাকে অবহিত করা হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং কাজের চূড়ান্ত অগ্রগতি সম্পর্কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে জানানোর নির্দেশ দেন। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দল থেকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা পেয়েছে। গণমাধ্যমগুলো ঐকমত্য কমিশনকে অকল্পনীয় সমর্থন দিয়েছে। শিগগিরই কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আসিফ নজরুল ও আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয় ঐকমত্য কমিশনের। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব এসেছিল। আমরা এটাকে একটি জায়গায় আনার কথা বলছি। উপস্থিত ৩০টি রাজনৈতিক দল যদি একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব। তিনি বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনায় যে সমস্ত বিষয় উঠে এসেছিল, সেগুলোকে আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছে অবহিত করেছি। তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ৩০টি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় এলে আমাদের আর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার প্রয়োজন হবে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে এক জায়গায় না এলে কমিশন একাধিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রস্তাব দেবে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। ১৫ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তার আগেই আমরা এটা শেষ করতে চাই।
বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। অধিকাংশ দলই তাদের পূর্বের অবস্থানে অনড় ছিল। বিভিন্ন ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট দেয় দলগুলো। তবে বিতর্ক এড়াতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে একমত হয় অধিকাংশ দল।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সম্মতির জন্য একটি গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। এটি জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পদক্ষেপ। অন্যান্য বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য তৈরি- বিশেষ করে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়ে পূর্বের দলগত অবস্থান থেকে অনেক রাজনৈতিক দল সরে এসেছে। এতে কমিশন খুব শিগগির সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরি করে সরকারের কাছে দিতে পারবে বলে মনে করছে। বিদ্যমান সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার জন্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তবে গতকালের আলোচনায় এটা প্রয়োজন না-ও হতে পারে বলে মতামত দিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
বৈঠকের ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, এক এক দলের আদর্শ এক এক রকম। রাষ্ট্রকেও তারা এক এক ভাবে সাজাতে চায়। এসব ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় জোরজুলুম করে একমত করানোর প্রচেষ্টাই অন্যতম সংকট। ঐকমত্য আলোচনায় ঘোরতর দ্বিমত ও নোট অব ডিসেন্টকে ঐকমত্য হিসেবে ধরে নিয়ে বাস্তবায়ন পদ্ধতি আলোচনা গ্রহণযোগ্য কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।