গ্রুপ বদল করায় হত্যা করা হয়েছে মামুনকে। এই হত্যার নির্দেশ আসে বিদেশ থেকে। এর নেপথ্যে মামুনের এক সময়ের বন্ধু ইমনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সোমবার সকালে মামলার হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে মামুনকে হত্যা করা হয়। গতকাল রাতে শুটার ফারুক ও রবিনকে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া আরও কয়েকজনকে আটক ও কিলিং মিশনে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে রাজধানীর হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার অপরাধজগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন ইমন ও মামুন। তাদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্য মতে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যতম মাফিয়া দুবাইয়ে অবস্থান করা জিসান আহমেদের দলে সম্প্রতি নাম লেখান মামুন। রাজধানীর আফতাবনগরের এফ ব্লকে ফ্ল্যাট ভাড়া করেন। নিয়োগ দেন বডিগার্ড। দিনপ্রতি ২ হাজার টাকা ভাড়ায় গাড়ি ব্যবহার শুরু করেন। আধিপত্যের লড়াইয়ে অন্যদের প্রতিযোগী হওয়ার ইঙ্গিত দেন। হত্যার হুমকি পেয়ে ইমনকে মোকাবিলার সক্ষমতা আছে বলে ঘোষণা দেন। এতেই বেঁকে বসেন ইমন। নিজের দলে থাকা কেউ অন্য কারও শেল্টারে নিজের সমকক্ষ হবে, এটি মেনে নিতে পারেননি তিনি। ইমনের নির্দেশে প্রকাশ্যে মামুনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার শত্রু হলে কী পরিণতি হতে পারে, সেই বার্তা পৌঁছে দিতেই ফিল্মি স্টাইলে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতে শুটার ফারুক ও রবিনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল রাতে কুমিল্লা সীমান্ত থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছে ডিবি লালবাগ বিভাগ। এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছিল কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া শুটাররা দীর্ঘদিন ধরে ইমনের গ্রুপের হয়ে কাজ করেন। ইতোমধ্যে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। মামুনকে গুলি করার সময় দুই শুটার ছাড়াও আশপাশে কয়েকজনকে ব্যাকআপ সদস্য রাখা হয়। গুলি করে কোমরে পিস্তল গুঁজে কিছু দূর গিয়েই ব্যাকআপ সদস্যদের কাছে অস্ত্র দিয়ে দেন তারা। অস্ত্র দুটির সম্ভাব্য অবস্থানও নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। শুটার দুজন গা-ঢাকা দিতে তখনই ঢাকা ত্যাগ করেন। মামুন হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার মুঠোফোনে জানান, আমি ঢাকায় না থাকায় মামলা করতে পারিনি। ঢাকায় গিয়ে মামলা করব। নিহত মামুনের ছোট ভাই ইশতিয়াক মো. ইকবাল বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার রাতে তাকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সূত্রাপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ভিকটিমের স্ত্রী মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা তার অপেক্ষায় আছি। এদিকে সরেজমিন গতকাল সকালে ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ রয়েছে। পুলিশ সেই স্থানটি ঘিরে রেখেছে।