শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বউ-শাশুড়ির মধুর সম্পর্ক

রচি জামান

বউ-শাশুড়ির মধুর সম্পর্ক

ছবি : ফ্রাইডে

বউ-শাশুড়ি শুধুই একটি সম্পর্কের নাম নয়, এর বাইরেও যোগ হয় দুটি প্রজন্মের, সময় ও পরিবেশ নিয়ে তাদের মাঝে চলে মিথস্ক্রিয়া। এতদিন যে সংসার শাশুড়ির অধিকারে পরিচালিত হতো, বৌমা সেখানে যোগ করে নতুন নৈপুণ্যের ছোঁয়া। এরই মাঝে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি, মতের অমিল, নতুন করে পাওয়া দায়িত্ব ইত্যাদি দুজনের সম্পর্কের মাঝে সৃষ্টি করে বৈরিতা। অথচ বউ-শাশুড়ির মধুর একটি সম্পর্ক এনে দিতে পারে অকৃত্রিম ভালোবাসায় পূর্ণ পরিবার।

 

মেয়েরা বাবার বাড়িতে যে পরিবেশে বড় হয়, শ্বশুরবাড়িতে ঠিক সে পরিবেশ পাবে না ধরে নিয়েই সেখানে যেতে হয়। অপরদিকে শাশুড়িকে মনে রাখা উচিত, নতুন যে মেয়েটি সংসারে আসছে, তাকে সহজ ও স্বাভাবিক একটি পরিবেশ উপহার দেওয়া তার দায়িত্ব। ভুলে গেলে চলবে না, আপনার বাড়িতে যে মেয়েটি আসছে, তার প্রথম সংসারই এটি। অথচ অনেক শাশুড়ি আশা করেন, তার বৌমা ঘরে পা দিয়েই পাকা গৃহিণীর মতো সবকিছু সামলাবে। এভাবে ভাবলে সবকিছুর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বৌমাকে শিখিয়ে নিতে হবে নিজের মতো করে, তবেই সে আপনার পছন্দ অনুযায়ী সংসারের সব কাজ করতে পারবে। এখানে নতুন বউদেরও থাকে অনেক হিসাবের পালা। নতুন সংসারে ঢুকে রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করে দৃশ্যপট পালটে দেওয়া সম্ভব নয়। আপনার শাশুড়ির নিজের হাতে গড়া সংসার চোখের নিমেষে বদলে দিতে পারেন না। তাই শাশুড়ির সঙ্গে বসে পরামর্শ করে ইতিবাচক পরিমার্জনগুলো করতে পারেন। এতে শাশুড়িও খুশি থাকবেন, আপনারও ভালো লাগবে।

 

শাশুড়ি ও বৌমা তখনই দূরে সরে যায় যখন সম্পর্ক বউ শাশুড়ির মতো থাকে। শাশুড়ির উচিত বৌমাকে মেয়ের মতো করে দেখা। ঠিক তেমনি বৌয়েরও উচিত শাশুড়িকে মায়ের স্থানে বসানো। বৌমারা শাশুড়ির কাছে সন্তান তুল্য। তাই নিজের মেয়েকে যেমন কষ্ট লাগার মতো কথা বলতে আপনার বাধে ঠিক তেমনি বৌমার ব্যাপারেও ভেবে কথা বলা উচিত। তাকে এমন কোনো কথা বলা ঠিক নয়, যাতে সে দিনে দিনে নিজের দূরত্ব টেনে আনে। এখানে নতুন বউদের করণীয় হতে পারে সাবলীল আচরণ বজায় রাখা। বাড়তি আবেগ দেখিয়ে দুই দিনেই সবার মধ্যমণি হতে চাওয়ার ইচ্ছাও অমূলক। বৌমাকেও শাশুড়ির মেয়ের মতো হতে হবে। মেয়ে কিন্তু প্রত্যেকটি কথায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকে না। কথা কাটাকাটি, তর্ক, মান-অভিমান করে আবার ঠিক যত্নও করে। এককথায় নিজের মায়ের থেকে শাশুড়িকে আলাদা চোখে দেখা ঠিক নয়। ঘর গোছানো, রান্না অথবা বউয়ের পোশাক রীতি অনেক কিছুই শাশুড়ির পছন্দমতো না হতেই পারে। দরকার হলে বউকে সঙ্গে নিয়ে দুয়েকদিন ঘর গোছান, শপিং করুন। বউ আপনাকে দেখে শিখে নেবে। রান্নার স্বাদ ঠিকঠাক রাখতে আপনার পাশেই রাখুন নতুন বৌকে। তাকেও শিখিয়ে দিন কীভাবে রান্না করতে হয়। রান্না বাজে হলেও অসন্তুষ্ট না হয়ে ভালো রান্না করতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। একে অন্যের সহযোগীও হতে হবে। শাশুড়ি ও বৌমা তখনই ভালো থাকে যখন তারা দুজন দুজনকে ছেলের অংশ মনে করে। আপনার বৌমাকে কষ্ট দিলে ছেলে যেমন ভালো থাকবে না, তেমনি শাশুড়িকে কষ্ট দিয়ে সংসার সুন্দর রাখা সম্ভব নয়। তার মনে উভয় দিক থেকেই কষ্ট বেড়ে যাবে। নিজেদের ভালো লাগার বিষয় নিয়ে ছোট ছোট হাসির পরিবেশ তৈরি করুন। একে অন্যের আড়াল করে কিছু করার চেষ্টা না করায় মঙ্গল। বৌ-শাশুড়ি উভয়ের ভাবা উচিত তারা একই সুতায় বাঁধা। কেউ কারও থেকে আলাদা নয়।

 

গল্প, হাসি আর জীবনের ছোটখাটো মজার ঘটনা শেয়ার করলে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। একে অপরের প্রতি ইতিবাচক থেকে ভালো পরামর্শ দেওয়া উচিত। এতে একজনের জীবনে অপরের অধিকার ও কর্তৃত্ব বিস্তার লাভ করবে। তখন উভয়ের মাঝে বিরাজ করবে আপন হাওয়া। শাশুড়ির আত্মীয়স্বজনকে যত্ন করা যেমন বৌমার দায়িত্ব, তেমনি বৌমার দিকের স্বজনদের ঠিকমতো যত্ন হচ্ছে কিনা, যোগাযোগ রাখছেন কিনা সেটা দেখাও শাশুড়ির দায়িত্ব। মনে রাখবেন, ভালোবাসা বা যত্ন হচ্ছে বিনিময়ের ব্যাপার। এগুলো একপাক্ষিকভাবে হয় না। উভয়ের প্রতি উভয়ের দায়িত্ব সমান অথবা বেশি থাকার প্রবণতা থাকতে হয়। পরিবারের কারও অসন্তুষ্টি নিয়ে সম্পর্কের উন্নয়ন হয় না। ঠিক তেমনি আপনার উদাসীনতা অপর পক্ষকে দায়িত্বহীন করে তুলবে। তাই অপরের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করতে হলে অবশ্যই নিজেকে ভালো ব্যবহার করতে হবে। বউ চাকরিজীবী হলে অবশ্যই তার কাজের প্রতি সম্মান দেখানো কর্তব্য। এতে করে শাশুড়ির প্রতি বৌয়ের সম্মান বাড়বে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর