বিয়ে মানেই নতুন যাত্রা। নবদম্পতির সামাজিক বন্ধন। আর নানা আয়োজনের সমাহার। বিয়ের আয়োজনটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হরেক রকম অনুষঙ্গের ব্যবহার চলে আসছে যুগ-যুগান্তর। সময়ের পালাবদলে বিয়ের ফ্যাশনেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই সাজসজ্জা আর পোশাক-আশাকে আভিজাত্য প্রকাশ।
জনপ্রিয় প্রেম’স কালেকশনের ডিজাইনার ও ডিরেক্টর প্রেম বম্বানি বলেন, ‘আমি গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্যাশন নিয়ে কাজ করে আসছি। বাঙালি নারী এবং শাড়ি সেই আবহমান কাল থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিশেষ মুহূর্তের এই শাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক মধুর স্বপ্নস্মৃতি।
বর্তমানে বিয়ের কনে এবং অনুষ্ঠানে আসা নারীদের কাছে লেহেঙ্গা এবং গাউনও পছন্দের শীর্ষে। গায়ে হলুদের জন্য রয়েছে আমাদের আলাদা কালেকশন। সবাই চায় বিয়ের শাড়ি বা লেহেঙ্গাটা এক্সক্লুসিভ। এটি একটি স্বপ্ন। এই স্মৃতিময় স্বপ্নবোনা সাধারণ কারিগর দ্বারা সম্ভব নয়। আমাদের ডিজাইনের রঙের বৈচিত্র্য, কারুকার্য, পোশাকের স্টাইল সম্পূর্ণ আলাদা, যা পরলে কনেকে দেবে স্মার্ট, লম্বা এবং স্লিম লুক। অনেকগুলো দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় একটি বিয়ের শাড়ি বা লেহেঙ্গা। বিয়ের পোশাকের দায়িত্ব আমরা সগৌরবে নিয়ে থাকি।
আমার ডিজাইন করা বিয়ের লেহেঙ্গা এবং শাড়ি কিনতে অতিরিক্ত সময় এবং টাকা খরচ করে অনেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যান। তাদের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে এক ছাদের নিচে আমার নতুন ডিজাইনসহ বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের এক্সক্লুসিভ বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা, গাউন, শেরওয়ানি, পাগড়ি ছাড়াও গায়ে হলুদের এক্সক্লুসিভ শাড়ি এবং বিয়ের অতিথিদের জন্য পোশাকের সব রকমের কালেকশনের সমারোহ ঘটিয়েছি প্রেম’স কালেকশনে।’
বর-কনের লাগেজ
বিয়ের অনুষঙ্গের শুরুতেই আসে বর-কনের লাগেজ। আর এসব লাগেজের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের পণ্যটিই সেরা। প্রেসিডেন্ট, ডেসি মিলানসহ অসংখ্য ব্র্যান্ডের লাগেজ বাজারে পাওয়া যায়। সাধ্যের মধ্যে আপনার পছন্দের লাগেজটি লুফে নিন।
ব্র্যান্ডেড লাগেজগুলোর দাম শুরু হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। তবে আকার ও উপাদানভেদে এর দাম হতে পারে ৯ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। চাইলে নন-ব্র্যান্ডেড লাগেজ কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে লাগেজের জন্য গুনতে হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। কেনার সময় অবশ্যই স্থায়িত্বের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। জায়গার পরিমাণ, হ্যান্ডেল, পকেট, চাকা, ইত্যাদি দেখে নেওয়া ভালো।
বরের শেরওয়ানি-পাগড়ি
বরের মাথার তাজ-পাগড়ি আর শেরওয়ানি আভিজাত্যের প্রতীক। বাজারে বিভিন্ন মানের শেরওয়ানি পাওয়া যায়। ফেব্রিক, রং দেখে ভালো মানের শেরওয়ানিটি কেনা উচিত। গোল্ডেন, সিলভারের পাশাপাশি আজকাল শেরওয়ানির রঙে ভিন্নতার দেখা মিলছে। তবে যে রংই হোক না কেন তা অবশ্যই উজ্জ্বল হতে হবে। সঙ্গে মিলিয়ে পায়জামা বেছে নিতে হবে। সেই সঙ্গে শেরওয়ানি কাটিং পাঞ্জাবির কটি বা হাতের কাজের পাঞ্জাবি বেশি পরতে দেখা যায়। বাজারে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাবেন পছন্দের শেরওয়ানি। আর বরের সাজে চমক আনতে বেছে নিন রঙিন ওড়না। সুন্দর একটি ওড়নার দাম পড়বে ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। মানানসই একটি পাগড়ির দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।
বিয়েবাড়ির বধূ
বিয়েতে শাড়ি তো সবাই পরে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ড্রামা তৈরির জন্য ড্রেপিং নিয়ে মজার এক্সপেরিমেন্ট কনেরা করতেই পারেন। কাফতান কিংবা গাউন স্টাইলের প্রি ড্রেপড স্টাইলের শাড়ি কিন্তু দারুণ দেখায়। স্কার্ট শাড়িতেও তৈরি হবে কাঙ্ক্ষিত ড্রামা। সাধারণত আগে থেকে কুচি সেট করে রাখা হয় এসব শাড়ির। ম্যাটেরিয়াল হিসেবে চাই এমন উপাদান, যাতে শাড়ির ফ্লুয়িডিটি বজায় থাকবে, হাঁটা-চলায়ও অস্বস্তি আসবে না। লেহেঙ্গাতেও ড্রামা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। মারসালা, ব্রাউন, ডার্ক এমারেল্ড, বার্গেন্ডি, পার্পল আর কালোর মতো অভিজাত রংগুলো ড্রামার পরিপূরক। এসব রঙের লেহেঙ্গায় সাজা কনে সবার নজর কাড়বেনই। লেস, ভেলভেট, স্যাটিন, সিল্ক দিয়ে তৈরি পোশাকে হওয়া যায় চমৎকার ড্রামাটিক। সঙ্গে এমবেলিশমেন্ট হিসেবে মিরর ওয়ার্ক, হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারি, অ্যান্টিক জারদৌসি, বিড আর স্টোন সেটিং বেশি মানাবে। লেহেঙ্গায় লং ফুল স্লিভ জ্যাকেট কিংবা কেপ লেয়ার করে পরে নেওয়া যেতে পারে বাড়তি নাটকীয়তার জন্য। ড্রামাটিক কনেরা বেছে নিতে পারেন স্টেটমেন্ট জুয়েলারি। চোকার, মাথাপট্টি নয়তো হাতের গয়নায় যেন ফুটে ওঠে অপ্রচল আবেদন।
পাশ্চাত্যের রঙে কনে
পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক পরার প্ল্যান করে নিতে পারেন কনেরা। অন্যতর লুক তৈরি হবে এতে। নতুন বউদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে ব্যাপারটা। ঘরভর্তি চকচকে শাড়ি-গয়না পরা অতিথির মাঝে হারিয়ে না গিয়ে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপনের চমৎকার এক সুযোগ কিন্তু! আন্ডারড্রেসড না থেকেও যে সহজভাবে বউ সাজা যায়, তা দেখিয়ে দেওয়া যাবে সবাইকে। ইংলিশ গার্ডেন স্টাইল বা কনটেম্পরারি স্টাইলটা এ ক্ষেত্রে জুতসই। পোশাকে ট্র্যাডিশনাল লাল এড়িয়ে পিচ, আইসি ব্লু, পিঙ্ক, ব্লাশ, লাইট মিন্ট, টিল-এর মতো প্যাস্টেল রংই নিতে হবে শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গায়। সাদা, বেইজ, কাস্টার্ড কিংবা মভের মতো ম্রিয়মাণ রংগুলোও বেছে নেওয়া যায়। আরেকটু উজ্জ্বল রঙে যদি সাজতে চান, ট্র্যাডিশনাল কালার প্যালেটে সামান্য টুইস্ট মন্দ লাগবে না। সে ক্ষেত্রে মারসালা, ট্যাঞ্জারিন কিংবা ব্রিক রেড কনের জন্য দুর্দান্ত। যেহেতু সনাতন লুক থেকে আলাদা হবে এই স্টাইল, সেহেতু পোশাকে অজস্র সূক্ষ্ম কারুকাজ নয় বরং লেইসি ডিটেইল, লাইটওয়েট স্টোনওয়ার্ক, পার্ল সেটিং কিংবা হালকা সুতার কাজে তৈরি করা চাই কনের পোশাক। স্টাইলের ক্ষেত্রে শাড়ি, লেহেঙ্গা বা শারারার সনাতন লুককে হাইলাইটস করে পাশ্চাত্যের ভাব আনা যেতে পারে। এ ছাড়া গাউন স্টাইলের শাড়িও দারুণ দেখাবে।
নববধূর ওড়না
বিয়ের সাজে সোনার গয়নার পাশাপাশি শাড়ির সঙ্গে মানানসই সাজ দিতে মানানসই ওড়নাও তো প্রয়োজন। তাই এখন শাড়ির চেয়ে বিয়ের ওড়না বেশি জমকালো নেওয়া হয়। এগুলো ১ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের হয়ে থাকে।
বর-কনের জুতা
বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা ও পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতাও জরুরি। বর-কনে দুজনেরই জুতা হতে হবে অনুষ্ঠানসম্মত। শেরওয়ানি বা পাঞ্জাবি যা-ই হোক, বরের জুতা খানিকটা কোলাপুরি, নাগরা বা কাজ করা জয়পুরি হলে ভালো মানাবে। নকশার পাশাপাশি জুতার রং ও প্যাটার্নে দেখা যাচ্ছে বৈচিত্র্য। নাগরা ও কোলাপুরি চটি জুতায়ও কেউ কেউ খুঁজে নিচ্ছেন আরাম। বরের শেরওয়ানির সঙ্গে মিলিয়ে জুতার রং ঠিক করতে হয়। বিয়ে বা বৌভাতে কনে শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে উঁচু হিল পরতে পারেন। কনের জুতার ক্ষেত্রেও পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কেনা উচিত। বিয়ের জুতাগুলো বেশির ভাগ সময় উঁচু হিলের মধ্যে নেওয়া হয়। জুতার রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে। জরি, পুঁতি, পাথরে জমকালো জুতাই বিয়ের জন্য উপযুক্ত। এক্ষেত্রে জুতার রং স্যুট-প্যান্টের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে ভালো হয়। তবে যাই পরুন না কেন, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আরামদায়ক হয়।
বিয়ের প্রসাধনী
বিয়ে মানেই নানা রকম প্রসাধনীর ব্যবহার। যেহেতু শীতকাল তাই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এমন প্রসাধনী কেনাই উত্তম। প্রসাধনীর তালিকায় প্রথমে রাখুন কোল্ড ক্রিম। এটি ত্বক মসৃণ করে আবার এন্টি এজিং ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার হয়। ক্রিম কেনার আগে উপাদান হিসেবে দেখতে হবে অলিভ অয়েল, গোলাপের পাপড়ির তেলসহ উপকারী উপাদানের উপস্থিতি। শীতকালে বিয়ের পাত্র-পাত্রীর জন্য বডি স্ক্রাবের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নিয়মিত ব্যবহারে হাত-পায়ের ত্বক সুন্দর, মসৃণ ও চকচকে হয়।
বিয়ের পারফিউম
বিয়ের ব্যাপারটা ভিন্ন বর কিংবা কনে দুজনেই হবু জীবনসঙ্গীর মুগ্ধতার সঞ্চার ঘটাতে চাই সম্মোহনী সৌরভ। বাজারে অসংখ্য ব্র্যান্ডের পারফিউম পাওয়া গেলেও ভালো পারফিউম বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পারফিউম ব্যবহার করে দেখা। বিয়ের পারফিউমের এখনকার ট্রেন্ড হিসেবে বর ও কনের পছন্দ গারি, ডলমে অ্যান্ড গ্যাবানা, ল্যাকোস্টে, একসাদা, এলিজাবেথ, হার্ডিন, ভারসাচি, ডানহিল, হিউগো বস কিংবা বেকহ্যাম। মেয়ের জন্য ল্যাকোস্টের টাপ অব পিঙ্ক, ভারসচির ভারসেন্স, ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানার লাইট ব্লু উইমেন, হিউগো বসের ডিপ ব্রেড আর অরেঞ্জ, এলিজাবেথ, হার্ডিনের ব্রেড ডোর আর ফিফথ অ্যাভেনিউ দারুণ।
কোথায় পাবেন
রাজধানীর বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে মিলবে বিয়ের অনুষঙ্গ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রিচ ম্যান, লুবনান, ইনফিনিটি, প্রেম’স কালেকশন, প্যারিস গ্যালারি, ব্র্যান্ডকিউ, প্যারিস গ্যালারি, অটু, রঙ, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, ইয়াংকি প্রভৃতি। এ ছাড়া যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, বেইলি স্টার, টুইন টাওয়ার, মৌচাক, গুলশান, বনানীর শো-রুমগুলোতে।