সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ কাটাতে...

দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ কাটাতে...

দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধকে অনেকেই একই অর্থে ব্যবহার করেন। আসলে দুটি বিষয় সম্পূর্ণ এক নয়, আলাদা অনুভূতিকে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে এটি ব্যবহার হয়।

দুর্বলতা : শারীরিক শক্তি কমে যাওয়া, কায়িক শ্রম সম্পাদনের জন্য যেমন হাতের কাজ করা, হাঁটা, দৌড়ানো বা অন্য শারীরিক কর্ম সম্পাদনের সময়  বেশি বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। একেই দুর্বলতা বলে।

ক্লান্তিবোধ : কেউ কাজ করতে গেলে প্রাথমিক অবস্থায় মোটামুটি স্বাভাবিকভাবেই চালিয়ে যেতে পারেন। তবে কিছুক্ষণ কাজ করার পরই হাঁপিয়ে ওঠেন, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়, কারও কারও মাথা ঘুরে ও বুক ধড়ফড় করে। বেশি কাজ করলে, অনিদ্রায় ভুগলে, মন খারাপ থাকলে, অলস জীবনযাপন করেন এমন ব্যক্তিরা হঠাৎ একটু বেশি পরিশ্রম করতে গেলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতার মতো জটিল অবস্থায় এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ অসুখ নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ। কিছু  বিবরণ—

দুর্বলতা : অনেক কাজ একত্রে সম্পাদন করতে গেলে মাংসপেশির ব্যথা, ভাইরাল ফিভার, সর্দি-কাশিজাতীয় অসুস্থতা, অতিরিক্ত শারীরিক কর্ম-সম্পাদন, হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত কায়িক শ্রমের কারণে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যেতে পারে। তবে অনেক ধরনের গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার জন্য যে কেউ দুর্বল হতে পারেন এবং তা দীর্ঘ সময় থাকে।

থাইরয়েড হরমোনজনিত অসুস্থতা : এতে দুর্বলতার পাশাপাশি কার্য-সম্পাদনে অনীহা, শারীরিক ওজন হ্রাস-বৃদ্ধি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, ত্বকের পরিবর্তন, বেশি শীত বা গরম অনুভূত হওয়া, কোষ্ঠ-কাঠিন্য অথবা পেট খারাপ হওয়া, চুল ও নখের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়াসহ অনেক ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়।

রক্তে লবণজাতীয় পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট হলে :-

বমি, পাতলা পায়খানা, কিডনির অসুখ, অত্যধিক ঘাম হওয়া, হরমোনজনিত অসুস্থতার জন্য এমন পরিস্থিতি হতে পারে। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের কারণে এবং এসব অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যবহূত ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণেও দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, টিআইএ জাতীয় অসুস্থতার কারণেও হয়।

ক্লান্তিবোধ : যদি কারও দুসপ্তাহের বেশি ক্লান্তিবোধ অনুভব হয় তাহলে বুঝতে হবে, বড় ধরনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিয়েছে এবং চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

রক্তশূন্যতা : কখনো কখনো রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে।

হৃদরোগ : ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের সমস্যা, জন্মগত হৃদরোগ, হার্ট ফেইলুর, কার্ডিওমাইওপ্যাথি, হৃৎপিণ্ডে রিং পরা বা বাইপাস অপারেশনের পরবর্তী অবস্থা ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ক্লান্তিবোধের সঙ্গে বুকের ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হাত, পা, মুখ ফুলে যাওয়া  বা পানি আসা, মাথাঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, রাতে শ্বাসকষ্ট ও কাশি দেখা দেওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়া ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা। কিডনি ফেইলুর। লিভারের অসুস্থতা। উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা। বিষণ্নতা রোগও দুর্বলতার কারণে হতে পারে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর