সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ

প্রয়োজন কুসংস্কারমুক্ত বিশ্ব

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল

প্রয়োজন কুসংস্কারমুক্ত বিশ্ব

এবার দি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেল্থ এ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে : ‘মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ- সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা’ (Dignity in Mental Health- Psychological and Mental Health First Aid for All)। বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে দিবসটি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উদ্যোগেও জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস। ভুল ধারণায় গড়া কুসংস্কারের শিকড় উপড়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে এবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে বলা হচ্ছে মানসিক রোগীদের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কুসংস্কারের কারণে মানসিক রোগীরা সমাজে যথাযথ মূল্য পায় না; অবহেলার শিকার হয়। ফলে তাদের রোগভোগ দীর্ঘায়িত হয়। কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে মানসিক রোগীরা কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকে আছে এখনো। সমাজের সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বৈজ্ঞানিক সত্যের আলোকেই প্রচলিত মিথগুলো ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য এটি জরুরি বিষয়। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলেেথর ঘোষণাপত্র থেকে দেখা যায় বিশ্বে প্রতি চারজনের একজন জীবনের কোনো না কোনো সময় মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ১৬.৫ শতাংশ এবং ৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের শতকরা ১৮.৪ ভাগ মানসিক রোগে আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশই কুসংস্কারের কারণে বৈজ্ঞানিক চিকিত্সাসেবা গ্রহণ করেন না বা চিকিত্সার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকেন। এ কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হচ্ছে বিভিন্ন বেদনাদায়ক ঘটনার শিকার হয়ে যারা জরুরি মনঃসংকটে আছেন তাদের জন্য মানবিক ও সহযোগিতাপূর্ণ প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি সংকটে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মর্যাদা রক্ষায় এটিই এ বছরের প্রতিপাদ্যের ‘সাইকোলজি ক্যাল অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ ফার্স্ট এইড’-এর মূল কথা। প্রায়ই মানসিক রোগীদের মৌলিক ইস্যুগুলো পদদলিত করা হয়। খাটো করা হয় তাদের যোগ্যতা। সুস্থ হওয়ার পরও আগের মানমর্যাদা ও অধিকার ফিরে পায় না তারা। মনোরোগ ডায়াগনোসিসের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক

অজ্ঞতার শাণিত চাবুক রোগীর পিঠে আঘাত হানে। কুসংস্কারের অন্ধ ছোবলে এভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায় অসংখ্য জীবন। মানসিক রোগের প্রতি মানুষের এই নেতিবাচক মনোভাব যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। বেশি শিকার হয়েছে গুরুতর মানসিক রোগীরা। মূলত এর জন্য অশিক্ষা ও কুসংস্কারই দায়ী। অবৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর ভর করেই ভুল সংস্কার ডালপালা বিস্তার করেছে। সমাজে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। মনে রাখা দরকার, মানসিক রোগ মানেই লজ্জার কোনো কারণ নয়। মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই অসুস্থতা। সব মানসিক রোগেরই বৈজ্ঞানিক চিকিত্সা সম্ভব। বর্তমানে অনেক উন্নত ও কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। রোগ পুরোপুরিই সেরে যাচ্ছে।

রোগীরা কর্মক্ষম থাকতে পারছে।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,

সাইকোথেরাপি, এনআইএমএইচ।

সর্বশেষ খবর