শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গ্যাস, গ্যাস্ট্রিক ও এনজিনা

গ্যাস, গ্যাস্ট্রিক ও এনজিনা

আমাদের সমাজে এসব বিষয় নিয়ে অনেক মতবিরোধ, ভ্রান্ত ধারণা, ব্যক্তির ব্যক্তিগত অনুভূতি ইত্যাদির মাধ্যমে এ তিনটি বিষয়কে মূল্যায়ন করা হয়। এ তিনটি কারণে পেটের উপরিভাগে অথবা বুকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণভাবে ক্ষণস্থায়ী হয়, যা কিছু সময় পর এমনিতে কমে যেতে পারে। আদতে এ তিনটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা।

গ্যাস : পেটে অত্যধিক বায়ু (গ্যাস) উত্পন্ন হলে, পেট ফেঁপে যায়, পেটে এক ধরনের প্রেসার বা চাপ অনুভূত হয়। যারা মোটা লোক স্বভাবতভাবেই তাদের পেটে মেদ জমে পেটের আকার বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক অবস্থায় তারা পেটে চাপ অনুভব করেন। এ অবস্থায় পেটে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস জমলে অস্বস্তিবোধ করেন, কারও কারও শ্বাসকষ্ট হয়, গ্যাস বের করে দিলে অনেকটা স্বস্তিবোধ করেন। পেটে গ্যাস হওয়ার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবাণু সংক্রমণকে দায়ী করা হয়। সাধারণভাবে বৃহদান্তে জীবাণু সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। বৃহদান্তে খুব বেশি স্টার্চজাতীয় পদার্থ থাকলে জীনাণু সংক্রমণ হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর থেকে  উত্পন্ন গ্যাস বৃহদান্তে চাপ প্রয়োগের ফলে এবং বৃহদান্ত সংক্রমিত হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার ফলে এক ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এ ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হতে পারে, যা অন্য তীব্র ব্যথার সঙ্গে একই ধরনের  অনুভূতির সঞ্চার করে। সংক্রমণ ক্ষুদ্রান্তেও  ছড়িয়ে পড়তে পারে। বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খেলে যেমন- বেশি  সবজি খেলে বৃহদান্তে স্টার্চের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত সবজি নির্বাচন করা জরুরি। গ্যাস্ট্রিক : পেপটিক আলসার একটি ডাক্তারি পরিভাষা। ডিওডেনাল আলসার ও গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং গ্যাসট্রাইট্রিস ও ডিউডেনাইট্রিসের চারটি প্রকারভেদ। সাধারণভাবে যাকে লোকজন গ্যাস্ট্রিক বলে আখ্যায়িত করে থাকে। এর ফলে রোগীর উপসর্গগুলো অনেক ক্ষেত্রেই একই ধরনের, তবে বেশ কিছু উপসর্গ দেখে চিকিৎসকগণ এ ধরনের অসুস্থতার ভিন্নতা নির্ণয় করতে পারেন। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে পেটের উপরি অংশে বা বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি থাকতে পারে। গ্যাসট্রাইট্রিস ও গ্যাস্ট্রিক আলসারের ব্যথা, খাওয়ার পর বা ভরা পেটে বৃদ্ধি পায় এবং ডিউডেনাইট্রিস ও  ডিউভেনাল আলসারের ব্যথা খালি পেটে হয়ে থাকে। তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে ব্যথা সব সময় অনুভূত হয়, ধরনভেদে খাওয়ার পর-খালি পেটে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

এনজিনা : হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ কমে গেলে এক ধরনের ব্যথা অনুভূত হয় যাকে এনজিনা বলা হয়। এনজিনার ব্যথা বুকে বা পেটের উপরিভাগে অনুভূত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এ ধরনের ব্যথা পরিশ্রমের কাজ করার সময় হয়ে থাকে। এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী ব্যথা যা পরিশ্রম বন্ধ করলে বা বিশ্রাম নিলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যথা নিরাময় হয়ে যায় এবং আবারও পরিশ্রমকালীন দেখা দেয়। বিশেষ করে যদি পেট ভরে খাওয়ার পর হাঁটেন বা পরিশ্রম করেন। অনেক সময় ব্যথার সঙ্গে শ্বাস ঘন হয়ে আসতে পারে, কারও কারও খুসখুসে কাশি দেখা দিতে পারে। অনেকের বুক ধড়ফড় করে থাকে। সাধারণ জনগণ সচেতন না হওয়ায় অনেক এনজিনার রোগী এ অবস্থাকে গ্যাস্ট্রিক ভেবে রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল বা এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করতে থাকেন। এসব ব্যক্তি অনেক দেরিতে বুঝতে পারেন যে, তারা এনজিনা বা হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন এবং ততদিনে হৃদরোগ বেশ জটিল পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

 

ডা. এম. শমশের আলী, সি. কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১

সর্বশেষ খবর