সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্রোথ হরমোনের সাতকাহন

অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল আনসারী

গ্রোথ হরমোনের সাতকাহন

অতিরিক্ত লম্বা হওয়া বা খাটো হওয়া কারও জন্যই কাম্য নয়। ছেলে অথবা মেয়ে শিশুর বেড়ে ওঠার সময় তাদের উচ্চতা ঠিক আছে কিনা তা বোঝাও অনেক বাবা-মায়ের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বলা বাহুল্য, আজকাল মা-বাবার সন্তানের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেক পিতামাতাই সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধির ব্যাপারে ততটা অভিজ্ঞ নন। সাধারণত সমবয়সী অপরাপর ছেলেমেয়েদের দেখে কেউ তুলনা করতে পারে যে তার সন্তানের দৈহিক বৃদ্ধি বেশি না কম। প্রতিমাসে অথবা তিন মাসে অথবা বছরে শিশু কয় সেন্টিমিটার লম্বা হলো তা মেপে রাখার দৃষ্টান্ত খুবই কম। আবার সবার  দৈহিক বৃদ্ধির হারও  একরকম নয়। জাতিগত বৈশিষ্ট্য, মা-বাবার উচ্চতা, পুষ্টিজনিত সমস্যা, বংশগত রোগ ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন হরমোনজনিত রোগে কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কম বা বেশি হতে পারে। যে হরমোনটি উচ্চতার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখ্য সেটি হলো মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত পিটুইটারি নামক হরমোন গ্রন্থি নিঃসৃত গ্রোথ হরমোন। ছোটকাল থেকে এই হরমোনটির আধিক্য হলে কেউ মাত্রাতিরিক্ত লম্বা হয় আর হরমোনটির কমতি হলে শিশু খর্বকায় বা বেঁটে হয়ে থাকে। দৈহিক উচ্চতা কমবেশি হলে স্বাস্থ্যগত সমস্যাকেও ছাড়িয়ে যায় ব্যক্তিগত ইমেজ। তাই উচ্চতা মাত্রাতিরিক্ত কমবেশি হলে বিশেষ করে কেউ খর্বকায় হলে সমস্যার অন্ত থাকে না। উচ্চতা কমবেশি হওয়ার কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। তবে এর কোনো কার্যকরী চিকিৎসা আছে কিনা তা জানা প্রয়োজন। হরমোন বিশেষজ্ঞরা গ্রোথ হরমোন দিয়ে খাটো লোকদের লম্বা করতে পারেন এ রকম একটা ধারণা অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। ধারণাটা অনেকটাই সঠিক। এতদসত্ত্বেও দেখা যায় যে বর্তমান বাস্তবতায় কোনো খর্বকায় রোগী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তেমন কোনো সন্তোষজনক ফল পান না। এর কারণ কি হতে পারে তা সবার জানা দরকার। সুস্থ স্বাভাবিক শিশু জন্মগ্রহণের পর কয়েক বছর প্রতি বছরে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে যা ধীরে ধীরে কমে প্রতি বছরে ৩-৫ সেন্টিমিটারে গিয়ে পৌঁছে। সাবালক হওয়ার সময় অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সে হঠাৎই উচ্চতা বৃদ্ধির হার কয়েক মাস বা বছরের জন্য বেড়ে যায় তারপর সাবালক হওয়ার পর উচ্চতা আর বাড়ে না বললেই চলে। এ সময় উচ্চতা বৃদ্ধি হতে পারে না কারণ শরীর লম্বা হওয়ার জন্য পা ও হাতের লম্বা অস্থিগুলোর যে অংশে হরমোন কাজ করে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। বলাই বাহুল্য, সাবালক হওয়ার পর হরমোন দিয়েও কাউকে লম্বা করা সম্ভব হয় না। সম্ভবত এ বিষয়টি না জানার কারণেই খর্বকায় শিশু বা তার অভিভাবকরা বেশ দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান যখন হরমোন চিকিৎসায় ফললাভ হয় না। যত কম বয়সে হরমোন চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো। হরমোন বিশেষজ্ঞরা কেবল আনুমানিক ১১ বছরের আগে এলেই গ্রোথ হরমোন দিয়ে ফলপ্রদ চিকিৎসা করতে পারেন। ১৫-১৬ বছরের পরে কেবল পায়ের সার্জারি করা ছাড়া উচ্চতা বাড়ানোর উপায় থাকে না। ভবিষ্যতে কেউ খর্বকায় হবেন কিনা অথবা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা বা তার শরীরে প্রকৃতই কোনো হরমোনের ঘাটতি আছে কিনা তা শিশু বিশেষজ্ঞরাও বুঝতে পারেন। মা-বাবারা যদি শিশুদের ওজন ও উচ্চতা কয়েক মাস পর পর মেপে লিখে রাখেন এবং চিকিৎসককে জানাতে পারেন তাহলে অনেক ভালো হয়। এটা সবচেয়ে উত্তম পন্থা। কারণ পরিবারের লোকজন সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারেন দেহের ঘাটতি ও বৃদ্ধির সমস্যা।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, হরমোন ও ডায়াবেটিস

বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর