অনেক বক্ষব্যাধির কারণেই বুকে কফ পেকে যেতে পারে। কফ পেকে যাওয়া বলতে বোঝায় কফের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। যে সব রোগের কারণে কফ হলুদ হয়ে যায় তার মধ্যে ফুসফুসে ফোঁড়া, ব্রংকিং-একটেসিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসসহ অনেক ধরনের বক্ষব্যাধি যেখানে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে সেগুলোকে বোঝায়। ব্রংকিংএকটেসিস হলে বেশির ভাগ রোগীরই পাকা হলুদ কফ কাশির সঙ্গে নির্গত হয়। এটা ফুসফুসের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এ রোগের ফলে ফুসফুসের কিছু শ্বাসনালিতে বড় ধরনের প্রদাহ দেখা দেয়। আক্রান্ত স্থানের শ্বাসনালিগুলো তখন ফুলে মোটা হয়ে যায়। ব্রংকিংএকটেসিসের অন্যতম প্রধান উপসর্গই হলো দীর্ঘস্থায়ী কফ-কাশি। বেশির ভাগ রোগীই চিকিত্সকের কাছে আসে কাশির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কফ পড়ার সমস্যা নিয়ে। ঘুম থেকে সকালে ওঠার পর কাশি বেশি হয়। একটু কাশিতেই প্রচুর পরিমাণে কফ বেরিয়ে আসে। যখনই জীবাণু সংক্রান্ত রোগী রক্ত স্বল্পতায় ভোগে, ফ্যাকাশে হয়ে যায়। আঙ্গুলের মাথা মোটা হয়ে যায়। যাকে আমরা ক্লাবিং বলে থাকি। অনেক দিন ধরে এ রোগ চলতে থাকলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ফুসফুসে ফোঁড়া হলেও হলুদ পাকা কফ কাশির সঙ্গে নির্গত হয়। ফুসফুসে ফোঁড়া বিভিন্ন রোগ জীবাণু দিয়েই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ফোঁড়া হতে দেখা যায়। ত্বকে ফোঁড়া হলে চিকিত্সক ছোট একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুঁজ বের করে দিয়ে এক কোর্স এন্টিবায়োটিক লিখে দেন। কিন্তু ফুসফুসের ফোঁড়া কাটাতে এত সহজ ব্যাপার নয়। বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দিয়ে এই ফোঁড়া হতে পারে। তাই প্রকৃত চিকিত্সার সফলতা নির্ভর করে কোন জীবাণু এই রোগের আক্রমণকারী সেটা চিহ্নিত করা। যক্ষ্মার জীবাণু দিয়ে যদি এই ফোঁড়া হয়ে থাকে তবে তো আর সাধারণ এন্টিবায়োটিক দিয়ে কোনো কাজ হবে না। ফুসফুসে ক্যান্সার বা টিউমার হলে সেখানে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে ফোঁড়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে স্টেফাইলোকক্কাস দিয়ে যে ফোঁড়া হয়, সেগুলো সংখ্যায় কয়েকটি হয়ে থাকে এবং ফোঁড়াগুলোর দেয়ালটা এত পাতলা থাকে যে, যে কোনো সময় সেটা ফেটে গিয়ে ফুসফুসের পর্দায় বাতাস জমা হয়ে নিউমোথোরাক্স তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্য স্থানে প্রদাহ থেকেও ফুসফুসে ফোঁড়ার জন্ম হতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হঠাৎ করে অথবা আস্তে আস্তে শুরু হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশ জ্বর আসে এবং খুব কেঁপে জ্বর আসে। প্রচুর ঘাম হয়, কাশি এবং কাশির সঙ্গে পাকা দুর্গন্ধযুক্ত প্রচুর কফ যায়। ফুসফুসে ফোঁড়া হলে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়। রক্তশূন্যতা দেখা যায় এবং ওজন বেশ কমে যায়। হাতের আঙ্গুলের মাথায় এক ধরনের পরিবর্তন আসে যাকে আমরা ক্লাবিং বলে থাকি। কোন জীবাণু দিয়ে এ রোগ হয়েছে সেটা নির্ণয় করা সফল চিকিত্সার জন্য খুবই প্রয়োজন। কফে অনেক সময় আমরা ক্যান্সার সেলেরও সন্ধান করে থাকি। তবে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে পরীক্ষা করে আমরা ফোঁড়ার সন্ধান পাই। আগেই লিখেছি আক্রমণকারী জীবাণুকে শনাক্ত করতে হবে। যথোপযুক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রোগীকে বিভিন্নভাবে শুইয়ে এবং বসিয়ে কফ ফেলার ধরন প্রশিক্ষণ দিয়ে পুঁজের মতো কফ নির্গত করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ বিষাক্ত কফ বের করতে না পারলে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া দুষ্কর।
লেখক : বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৫৯১৯৬৬৪।