শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মার্স ভাইরাস : সচেতনতা জরুরি

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

মার্স ভাইরাস : সচেতনতা জরুরি

২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে একজন প্রবাসী ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আসার পরপরই জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। প্রথমে সাধারণ সর্দি-কাশি মনে হলেও পরে পরীক্ষা করে তার দেহে মার্স ভাইরাস শনাক্ত করা হয়।

কীভাবে উৎপত্তি : ‘মার্স’ অর্থাৎ ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ মূলত ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের এক জটিল রোগ। সর্বপ্রথম ২০১২ সালে সৌদি আরবে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশে যেমন ওমান, আরব আমিরাত ও মিসরে এই ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব ধরা পড়লে এর নাম দেওয়া হয় ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ বা সংক্ষেপে ‘মার্স’। করোনা ভাইরাস গোত্রীয় বলে ভাইরাসটির নাম ‘মার্স করোনা’ ভাইরাস। ২০০২ সালে মহামারীর রূপ নিয়েছিল এ ভাইরাসের আক্রমণ। সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বর আচমকা প্রবল শ্বাসকষ্টে পরিণত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অন্তত ৮০০ মানুষ। ২০১২ সালের এপ্রিলে মধ্যপ্রাচ্যে এ মার্স ভাইরাসসৃষ্ট জটিলতা নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ।

যেভাবে ছড়ায় : ধারণা করা হয়, মানবদেহে মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে উট থেকে। এজন্য এ রোগকে কেমেল ফ্লুও বলা হয়। কাতার, ওমান, সৌদি আরব ও মিসরে উটের রক্তেও ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া পরে এর অন্যান্য উৎস হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, শূকর, বাদুড়সহ বিভিন্ন প্রাণী। আর মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাস ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা সংস্পর্শ থেকে। ভাইরাসে আক্রান্ত উটের সংস্পর্শে এলে মানুষের মধ্যে যেমন ছড়ায়, তেমনি ভালোভাবে রান্না না করা বা অর্ধসিদ্ধ উটের মাংস খেলে বা উটের কাঁচা দুধ খেলেও ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণ : মূলত ‘মার্স করোনা’ শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫ থেকে ৭ দিন পর থেকেই শরীরে অল্প অল্প জ্বর, সঙ্গে সর্দি কাশি, শরীর ও মাথাব্যথা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, অরুচি, বমি, শরীরিক দুর্বলতার মতো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে অনেক সময় জ্বরের কয়েকদিন পর শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং তা ক্রমে জটিল আকার ধারণ করে। রোগী স্বাভাবিক শ্বাস নিতে পারে না, ঘন ঘন ও ছোট ছোট শ্বাস নেয়।

চিকিৎসা : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক রোগী এমনিতেই সেরে যায়। মার্স করোনা ভাইরাসের কোনো এন্টিভাইরাল আবিষ্কৃত হয়নি। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীকে কয়েকদিন আলাদা রাখতে হবে, পরিপূর্ণ বিশ্রামসহ প্রচুর তরল জাতীয় খাবার প্রদান করতে হবে যেমন স্যালাইন, শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি। প্রয়োজনে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

প্রতিরোধ : এ রোগের কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে চাই ব্যাপক জনসচেতনতা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাবোধ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত কোনো ব্যক্তি সর্দি, কাশি বা জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্তত ১৪ দিন তাকে বাড়িতে একটি ঘরে আলাদা রাখতে হবে। যারা ওমরাহ পালন করতে বা অন্য কাজে সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যাবেন তারা অবশ্যই সেখানে উটের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন, বিশেষ করে শহরের বাইরে ভ্রমণে বা বেড়াতে গেলে। যে এলাকায় বেশি উট থাকে, সেসব এলাকা এড়িয়ে চলাই ভালো। নিতান্তই যদি ওইসব জায়গায় যেতেই হয় তবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। লেখক : সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর