মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কার্ডিওভাসকুলার এক্সিডেন্ট

কার্ডিওভাসকুলার এক্সিডেন্ট

মানব জীবনে একটি চরম বিপর্যয়ের নাম হার্ট অ্যাটাক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হার্ট অ্যাটাককে কার্ডিওভাসকুলার এক্সিডেন্ট নামে অভিহিত করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার মতো হার্ট অ্যাটাকও একটি দুর্ঘটনা, যার পরিণতি সামান্য আহত হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করার মতো অবস্থাও হয়ে থাকে, মানে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু থেকে বেঁচে গেলেও বাকি জীবন চরম অসুস্থতায় কাটাতে হয়। এ ধরনের রোগীরা হার্টের দুর্ঘটনা থেকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হৃদরোগের স্বাভাবিক পরিণতি কিন্তু হার্ট অ্যাটাক নয়। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ/ব্লকজনিত হৃদরোগীদের স্বাভাবিক পরিণতি হলো দিনে দিনে ব্যক্তির হৃৎপি  দুর্বল হতে থাকবে, দিনে দিনে বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেতে থাকবে, ব্যক্তির শারীরিক যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা দিনে দিনে কমতে থাকবে। এভাবে রোগী ধীরে ধীরে হার্ট ফেইলুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। হার্ট ফেইলুরের ফলে শরীরে পানি জমতে থাকবে, শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকবে, পা ও পেট ভারী হতে থাকবে, পেটে প্রচুর গ্যাস হবে এবং পেটে সব সময় ভরা ভরা ভাব থাকবে সঙ্গে ক্ষুধামন্দা দেখা দেবে। যেসব ব্যক্তিগণ হার্টব্লক জনিত অসুস্থতায় ভুগছেন তারা অত্যধিক উত্তেজিত হলে, অত্যধিক টেনশনে পতিত হলে, অত্যধিক পরিশ্রম করলে, অন্য কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হলে, অত্যধিক ভয় পেলে, রক্তচাপ (ব্লাড প্রেসার) অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে, কখনো কখনো অতিভোজন করলে, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে বা অত্যধিক কমে গেলে, হঠাৎ হার্টের ওষুধ বন্ধ করে দিলে, হার্ট অ্যাটাকে পতিত হতে দেখা যায়। তবে এসব কারণ ছাড়াও অনেককে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, যার সঠিক কারণ এখনো জানা যায় নাই। হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া, অত্যধিক শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে প্রচন্ড চাপ অনুভূত হওয়া, শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, প্রচ  অস্থিরতা বোধ করা, বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া হলো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে, রোগী হার্ট অ্যাটাকে পতিত হয়েছে এবং দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যে সব হাসপাতালে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সিসিইউ ওয়ার্ড আছে সেসব হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। রোগীর লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ইসিজি এবং রক্তের সিকেএমবি অথবা ট্রপোনিনের মাত্রা নির্ণয় করে খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। রোগীর লক্ষণ মিলে গেলে রোগীকে জিহ্বার নিচে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে ব্যবহার করা এবং দ্রুত ৩০০ মি.গ্রা এসপিরিন ও ৩০০ মি.গ্রা ক্লোপিডোগ্রেল নামক ওষুধ এবং সঙ্গে ৪০ মি.গ্রা ওমিপ্রাজল খাওয়ানোর মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করলে অনেকাংশেই মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়। ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণিত হলে সাধারণ হাসপাতাল ক্লিনিক বা ডাক্তারে চেম্বারে রোগীকে এনক্সাপাইরিন ইঞ্জেকশন দিয়েও হাসপাতালে প্রেরণ করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর জটিলতাও তত কম হবে। জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়ে মানে মধ্য বয়সে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সেই মানুষ সবচেয়ে বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। হার্ট অ্যাটাকে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর হার প্রায় ২০-২৫% এবং পরবর্তী এক বছর সময়ের মধ্যেও মৃত্যুর হার অনেক বেশি, হার্ট অ্যাটাক পারিবারিক, সামাজিক পর্যায়ে এক ভীষণ বিপর্যয় ঘটিয়ে থাকে। এতকিছু বিবেচনা করে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে পূর্ব থেকে যে সব প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা করতে সচেষ্ট থাকেন। প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় হিসেবে অনেক কিছুকে বিবেচনায় আনা হয়। যেমন-স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ধারার অভ্যাস করা, হৃদবান্ধব খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়মিত কায়িকশ্রম সম্পাদন করা, অত্যধিক কাজের চাপ ও টেনশন পরিহার করা, উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকলে যেকোনো ভাবেই হোক তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিগণের রক্তের উচ্চমাত্রার সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা, ইনসুলিন গ্রহণ করা ব্যক্তিগণ হাইপোগ্লাইসিমিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা, রক্তের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা। যারা ইতিমধ্যেই হার্টব্লকে আক্রান্ত হয়েছেন বা ইসকিমিক হার্ট ডিজিজে ভুগছেন অবহেলা না করে তাদেরকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল

কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর