বুধবার, ৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

রোজায় হৃদরোগীদের করণীয়

রোজায় হৃদরোগীদের করণীয়

রোজায় হৃদরোগীর প্রাত্যহিক জীবনযাপন কেমন হওয়া উচিত? যারা ইতিমধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের খাদ্যাভ্যাস কিছুটা পরিবর্তন করা উচিত। সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। সাহরির সময় হালকা সুষম খাবার বিশেষ করে দুধ, ডিম, খেজুর এবং অল্প ভাত বা রুটি গ্রহণ করা যেতে পারে। ঝালযুক্ত খাবার পরিহার করা ভালো। কেননা সারা দিন রোজায় এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের কারণে একটা অস্বস্তি বোধ হতে পারে। পানি পরিমিত পান করা ভালো বিশেষ করে যাদের হার্টের পাম্প ক্ষমতা বা EF% কম। দিনভর রোদ হতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা, তাতে করে পানির পিপাসা কম লাগতে পারে। ইফতারে দইচিঁড়া, সঙ্গে খেজুরসহ সুসম ফল-ফলারি খাওয়া শ্রেয়। পারতপক্ষে, ভাজা-পোড়া বিশেষ করে ছোলা-পিঁয়াজু বেগুনি ও হালিম বর্জনীয়। সারা দিন রোজা রেখে ভাজা-পোড়া খাবার খেলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। উল্লেখ্য, অধিকাংশ হার্ট অ্যাটাক বেশি বেশি অসম খাবার গ্রহণের ফলে সাহরি ও ইফতারের সময় হয়ে থাকে। হার্ট অ্যাটাক হলে ক্যাথল্যাব আছে এমন হাসপাতালে দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে হার্টের ক্ষতির পরিমাণ কম হবে ও পরবর্তী জটিলতা এড়ানো যেতে পারে। আগের হার্ট অ্যাটাকসহ স্টেনটিং বা বাইপাস সার্জারির কারণে এমনিতেই নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি জীবন ধারার পরিবর্তন বিশেষ করে নিয়মিত হাঁটা বা দৌড়ানো, ওজন কমানোসহ ধূমপান বর্জন যেমন আবশ্যকীয়। তেমনি সাহরি এবং ইফতারে বেশি মাত্রায় অসম খাবার গ্রহণে হার্ট অ্যাটাক পুনঃহাসপাতালে ভর্তির কারণসহ ঝুঁকি আরোপ বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। হার্ট দুর্বল থাকার কারণে অতিরিক্ত গুরুপাক খাবার গ্রহণে দুর্বল হৃৎপিন্ডের ওপর চাপ বেড়ে যেতে পারে বিশেষ করে খাদ্যকে পাকস্থলিতে হজমের জন্য অতিরিক্ত শক্তির জোগানের জন্য। ওষুধ নিয়ে প্রায়শ রোগীরা উদ্বিগ্ন থাকেন। সকাল দুপুর রাতের বদলে ইফতার, রাত ও সাহরি এই তিন সময়ে করে নিতে পারেন। বিশেষ করে দুপুরের ওষুধ রাতে খাবেন। উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও বহুমূত্র বা ডায়াবেটিসের ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো খাবেন।

যাদের হার্টের কর্মক্ষমতা বা EF% কম তারা পানি বা তরল ১-১.২৫ লিটার /২৪ ঘণ্টায় পান করবেন, কেননা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পানি ফুসফুসে জমে হার্ট ফেইলিওর তরান্বিত করতে পারে। অল্প অল্প করে লম্বা সময় নিয়ে খাবার গ্রহণ শ্রেয়। যারা হৃদরোগের কারণে ঝুঁকিতে আছেন বা হার্ট অ্যাটাকে ভুগছেন বা যাদের স্টেন্টিং বা বাইপাস সার্জারি করা আছে তাদের পারতপক্ষে রোজা না রাখাই শ্রেয়। হৃদরোগী যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং যাদের হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা স্বাভাবিক তারা বেশি করে পানি বা তরল খাবার খাবেন। কেননা করোনা রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটা বেশি থাকে। যে সব করোনা রোগীর হার্ট দুর্বল বা কোভিড মাইয়োকার্ডাইটিস হয়ে হার বড় হয়ে পাম্প ক্ষমতা কমে গেছে তারা কিন্তু হার্ট ফেইলিওর তথা জমাট রক্তের কারণে স্ট্রোকে ভুগতে পারেন। এবার তাদের রোজা না রাখাই শ্রেয়।

অধ্যাপক ডা. এএইচএম ওয়ালিউল ইসলাম

এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর