সোমবার, ১০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হৃদরোগীদের ঈদ আনন্দ

হৃদরোগীদের ঈদ আনন্দ

আসছে ঈদ, ঈদে কী খাওয়া যাবে, কী খাওয়া যাবে না, এ নিয়ে হৃদরোগীদের মধ্যে বেশ উৎসুক্য দেখা যায়। এ ছাড়া করোনার কারণে এবার আমাদেরকে একটু আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। প্রাধান্য দিতে হবে কোন খাবারে করোনা প্রতিরোধ সহায়ক হয়। বিশেষ করে হৃদরোগীদের এ বিষয়ে আরও যত্নবান হতে হবে। ঈদে হৃদরোগীদের জন্য অত্যধিক তেল-চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া উত্তম, বিশেষ করে পশুর চর্বি মোটেই খাওয়া উচিত হবে না, যেমন- সিনার মাংস, ভুঁড়ি, মগজ ইত্যাদি। ঈদে মিষ্টি জাতীয় খাবার সীমিত মাত্রায় গ্রহণ করাই শ্রেয়, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। অনেক হৃদরোগী প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকেন এ ধরনের খাবারগুলো ঈদের মেন্যুতে জনপ্রিয় আইটেম হওয়ায় এগুলো খেতে না পারা তাদের মনঃকষ্ট হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই এসব ব্যক্তির বয়স ৫০-৬০ বয়সের ঊর্ধ্বে হয়ে থাকে, এসব ব্যক্তির বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ায় এবং তাদের শারীরিক কর্মকান্ড অনেক বেশি কম হওয়ার দরুন খাদ্যের চাহিদাও কমে যায়। তার সঙ্গে হজম প্রক্রিয়াও ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে এসব ব্যক্তির অল্প পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের ফলে উদরপূর্তি ঘটে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই ওজনাধিক্যে ভুগতে থাকেন, অনেকের পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। এত কিছু বিবেচনা করে দেখা যায় যে, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এবং চাহিদা দুই-ই কমে যায়। অনেক চিকিৎসক এসব রোগীকে বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। তাই বেশি বেশি শাকসবজি গ্রহণ করার ফলে অন্যসব খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এমনিতেই কমে যায়, কারণ প্রত্যেকেরই খাদ্য গ্রহণের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বজায় থাকে। কোনো এক জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করলে অন্য জাতীয় খাবারের পরিমাণ কম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। সবকিছু বিবেচনা করে হৃদরোগীদের খাদ্য গ্রহণের বিভিন্নতা ও উপাদানের অনুপাত ঠিক রেখে সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে। মোট খাদ্যের পরিমাণের অর্ধেক শাকসবজি ও ফলমূল এক চতুর্থাংশ শর্করা জাতীয় খাবার বাকি এক চতুর্থাংশ আমিষ তেল-চর্বি ও অন্যান্য খাদ্যবস্তু গ্রহণ করতে হবে। তাতে করে হৃদরোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে খাদ্যকে হৃদবান্ধব করা যাবে। ঈদে দুই এক বেলা হৃদরোগীদের পছন্দনীয় খাবার গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই। তবে সারা দিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই উপরের অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। এর ফলে ঈদের মুখরোচক খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করলে ক্ষতির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে অনেকে মনে করেন পোলাও, মাংস, বিরিয়ানি, সেমাই, পায়েস, জর্দা এসব খাবার গ্রহণ করলে তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এটা ঠিক নয়, কারণ এসব খাবারের তাৎক্ষণিক প্রভাবের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবই বেশি হয়।  ঈদে দুই এক বেলা মজাদার খাবার গ্রহণ করলে ব্যক্তির মনঃকষ্ট দূর হবে এবং ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। তবে কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের খাবার গ্রহণ অব্যাহত রাখা যাবে না । ঈদে কী ধরনের খাবার গ্রহণ করলে রোগী অসুস্থ হয়ে পড়বেন সেটা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। ঈদে যেকোনো খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণে হৃদরোগীরা তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। হৃদরোগীদের ঈদে খাদ্য গ্রহণের ধরনের চেয়ে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। এছাড়া অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এ সময় অতিভোজন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট.

চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর