স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বলতে এক প্রকারের প্রচেষ্টা বোঝায়। যার মাধ্যমে প্রচলিত ভুল ধারণা এবং সামাজিক স্টিগ্মা, ট্যাবু ইত্যাদি দূর করে স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ, শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার ওপর সঠিক জানা যায়। স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। স্তন ক্যান্সার নিয়ে লজ্জা বা সামাজিক ট্যাবুও রয়েছে। সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে বাংলাদেশে নারী বা পুরুষ যে কেউই প্রকাশ্যে স্তন বিষয়ক কোনো আলোচনা করতে অস্বস্তিবোধ করে। একইভাবে নারীদের স্তনে কোনো পরিবর্তন বা প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেও তারা তা গোপন রাখে। এমনকি অনেকেই মা বা স্বামীর কাছেও প্রথমদিকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। এর ফলাফল শেষ পর্যায়ে গিয়ে শনাক্ত হয়। তখন করার কিছুই থাকে না।
স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ : সমাজের সবাই সচেতন হলে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা গেলে স্তন ক্যান্সার ক্ষেত্রবিশেষে পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য এবং এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার হ্রাস করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়েই দ্রুত শনাক্তকরণ করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত। কারণ কথায় আছে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ উত্তম।
শনাক্তকরণের উপায়
স্তনের স্ব-পরীক্ষা : চিকিৎসকেরা ২০ বছর বয়স থেকে বাড়িতে বসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে স্তনে কোনোরূপ অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তন থাকলে তা বোঝা যায়।
শনাক্তকরণ : একজন ডাক্তার বা অন্য কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবী দ্বারা স্তনের পরীক্ষা করানো হয়। ২৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যে, মহিলাদের প্রতি ১ থেকে ৩ বছরে একবার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দ্বারা CBE করানো উচিত। এ ছাড়া ৪০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের প্রতি বছর অবশ্যই ১ বার নিয়মিত CBE করানো দরকার।
ম্যামোগ্রাফি : ম্যামোগ্রাফি হলো স্তনের এক ধরনের কম মাত্রার এক্স-রে। ম্যামোগ্রাফি স্তন টিস্যুর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভর বা মাইক্রোক্যালসিফিকেশন পরীক্ষা করে স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক শনাক্তকরণ নিশ্চিত করা হয়। ঝুঁকির মাত্রার ওপর নির্ভর করে ম্যামোগ্রামের সঙ্গে স্তনের এমআরআইও করা যেতে পারে।
স্তন স্বাস্থ্য পরিকল্পনা : ২৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে প্রতি ১-৩ বছর অন্তর একটি ক্লিনিকাল স্তন পরীক্ষা (CBE) করানো উচিত। ৪০ বছর বয়সের পরে, মহিলাদের প্রতি বছর একজন পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা CBE করা উচিত। ২০-এর অধিক বয়সী মহিলারা প্রতি মাসে একবার নিয়মিতভাবে স্তনের স্ব-পরীক্ষা (BSE) করতে পারেন। ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের প্রতি বছর একটি ম্যামোগ্রাম করা উচিত। যতদিন তারা সুস্থ থাকে ততদিন এই রুটিন চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে স্তনের স্ব-পরীক্ষা করার সময় একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে দেখিয়ে নেবেন যে তাদের স্ব-পরীক্ষার কৌশল সঠিক কি না? স্তন ক্যান্সারের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মহিলাদের প্রতি বছর একটি এমআরআই এবং ম্যামোগ্রাম করা উচিত। তাই এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থা থেকে চিকিৎসা নেওয়া উত্তম। অন্যথায় জটিলতা বাড়ে। তাই এ বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে আরও যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।
-অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান, ব্রেস্ট-খাদ্যনালি ও-কোলোরেক্টাল সার্জন
ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, গ্রীন রোড, ঢাকা।