অনেক ক্ষেত্রে একজন ডেন্টিস্টই প্রথম একজন ডায়াবেটিস রোগীকে শনাক্ত বা চিহ্নিত করতে পারেন এবং তাকে একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করতে পারেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ‘ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ারে’ প্রকাশিত প্রবন্ধে এ বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচজন মাড়ির রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একজনের টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকতে পারে এবং তারা এ বিষয়ে অবগত নন।
কেন ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
ডায়াবেটিস এবং মুখের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে যোগসূত্র হলো, রক্তে উচ্চমাত্রায় শর্করা। যদি রক্তে শর্করা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে মুখের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো তীব্রতর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শ্বেত রক্তকণিকাকে দুর্বল করে দেয়, যা মুখের যে সব ব্যাকটেরিয়া আছে তার সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, ডায়াবেটিসের কারণে প্রধান অঙ্গ জটিলতার ঝুঁকি কমানো যায়- যেমন চোখ, হার্ট এবং স্নায়ুর ক্ষতি ইত্যাদি। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে মুখের স্বাস্থ্য সমস্যার জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রধান প্রধান জটিলতা প্রতিরোধ করা যায় যেমন-চোখের ছানি পড়া, হৃদরোগের সমস্যা, বিভিন্ন নিউরো বা স্নায়ুরোগ সমস্যা, কিডনি সমস্যা ও মাড়ির রোগ বা Periodontal disease (ডায়াবেটিসের ষষ্ঠ জটিলতা) ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের যে সব সমস্যা উচ্চঝুঁকির সম্ভাবনা
শুষ্ক মুখ : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মুখের ভিতরের লালা (থুথু) প্রবাহ হ্রাস করতে পারে, ফলে মুখ শুকিয়ে গিয়ে শুষ্ক মুখে আরও ঘা, আলসার, সংক্রমণ এবং দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি করতে পারে।
মাড়ির প্রদাহ (জিনজিভাইটিস) এবং পিরিয়ডোনটাইটিস :
শ্বেত রক্তকণিকা দুর্বল করার পাশাপাশি, ডায়াবেটিসের আরেকটি জটিলতা হলো এটি রক্তনালিগুলোকে চিকন করে তোলে। এটি মুখসহ শরীরের টিস্যু থেকে পুষ্টির প্রবাহ এবং বর্জ্য পদার্থের প্রবাহকে ধীর করে দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেহেতু পেরিওডন্টাল ডিজিজ একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ, তাই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আরও ঘন ঘন এবং আরও গুরুতর মাড়ির রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ওরাল সার্জারি বা অন্যান্য দাঁতের সার্জারির পরে দ্রুত নিরাময় হন না, কারণ অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার জায়গায় রক্ত প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত বা কম হতে পারে।
থ্রাশ : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা প্রায়শই বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন তাদের বিশেষ করে মুখ এবং জিহ্বার ছত্রাক (Oral Candidiasis) সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের লালায় উচ্চ গ্লুকোজের কারণে ছত্রাক বৃদ্ধি পায়। ডেনচার পরা (বিশেষত যখন ক্রমাগত পরা হয়) বা নকল দাঁতের ব্যবহারকারীদের ছত্রাক সংক্রমণ বেশি হতে পারে।
মুখ গহ্বর অথবা জিহ্বায় ক্ষত বা ঘা : এ অবস্থাটি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও থ্রাশের উপস্থিতির কারণে হয়।
তামাক/ধূমপান/জর্দা/ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি ক্ষতিকর : তামাক ও ধূমপানের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ধূমপায়ী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন- অধূমপায়ীদের তুলনায় থ্রাশ এবং পেরিওডন্টাল রোগ বা মাড়ির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ২০ গুণ বেশি। ধূমপান মাড়িতে রক্ত প্রবাহকে ব্যাহত করে যা মুখের ভিতরে টিস্যু ক্ষত নিরাময়কে প্রভাবিত করতে পারে। তাছাড়া জর্দা, গুল ও সাদাপাতা ব্যবহার করলে মুখের ঘা ও সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ধূমপান ও তামাক সেবন ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা, মুখের বিভিন্ন রোগ এবং জটিলতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তরুণ বয়সে ধূমপান শুরু করে তারা পরবর্তীতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস আছে এমন কেউ যদি ধূমপান, তামাক সেবন করে তবে তাদেরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। ফলে তাদের মধ্যে মুখের ও ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও পায়ের পচনশীল রোগ ‘গ্যাংগ্রিন’ হওয়ার সম্ভাবনা। পেরিওডন্টাল রোগের চিকিৎসার সময় নির্ধারণের আগে পরামর্শ প্রয়োজন : ডেন্টিস্ট বা পিরিয়ডন্টিস্টের সঙ্গে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে পরীক্ষা করানোর আগে ও পরে একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। কারণ, যদি মুখের অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করা হয় তবে ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট বলবেন যে কোনো প্রি-সার্জিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে কিনা অথবা যদি খাবারের সময়সূচি বা সময় পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে আপনার ইনসুলিনের ডোজ (যদি আপনি ইনসুলিন গ্রহণ করেন) বা ওষুধের মাত্রা সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রয়োজনে ডেন্টিস্টকে বিশেষজ্ঞ ডায়াবেটিস ডাক্তারের নাম এবং ফোন নম্বর জানানো প্রয়োজন। কোনো প্রশ্ন বা উদ্বেগ দেখা দিলে আপনার ডেন্টাল সার্জন সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে যাতে যোগাযোগ করতে পারেন। সেই সঙ্গে আপনি যে সব ওষুধ গ্রহণ করছেন তার সব নাম এবং ডোজগুলোর একটি তালিকা ডেন্টিস্টকে জানান প্রয়োজন। ইতিমধ্যে যে ওষুধগুলো গ্রহণ করছেন তাতে হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা কম হতে পারে এমন ওষুধগুলো লিখতে ডেন্টিস্টকে এ তথ্য জানতে হবে। যদি একটি বড় সংক্রমণের চিকিৎসা করা হয়, সেই ক্ষেত্রে ইনসুলিনের ডোজ (যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাদের জন্য) সামঞ্জস্য করা প্রয়োজন হতে পারে। রক্তে শর্করা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত না হলে কোনো জরুরি ডেন্টাল পদ্ধতি স্থগিত করতে হতে পারে। তবে, তীব্র সংক্রমণ (যে সংক্রমণগুলো দ্রুত বিস্তার লাভ করে), যেমন ফোঁড়া, (Abscess/Cellulitis) সেগুলো অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডেন্টাল চিকিৎসা নিরাময়ে বেশি সময় লাগতে পারে। তাই ডেন্টাল সার্জনের চিকিৎসা-পরবর্তী নির্দেশাবলি খুব সচেতনভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন। কোনো কৃত্তিম দাঁতের জন্য বা ধারালো দাঁতের কারণে ঘর্ষণ লেগে জিহ্বা বা মুখ কেটে গেলে অবিলম্বে ডেন্টিস্টকে দেখিয়ে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ সেই ঘা বা ক্ষত পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁতের ক্যারিজ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে : এ বিষয়ে দুটি চিন্তাধারা আছে। একটি হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লালায় উচ্চ গ্লুকোজের মাত্রা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি ক্যারিজ (দাঁতের ক্ষয় বা গর্ত) এবং মাড়ির রোগের বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সারা দিনে ছোট, বেশি ও ঘন ঘন খাবার খেতে থাকে। এই কারণেও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ফলে ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয় হওয়ার সুযোগ বাড়ায়। অন্য পর্যবেক্ষণ বিশ্বাস করে যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কী খাবেন এবং তাদের চিনি গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে এবং তারা ক্যাভিটি-সৃষ্টিকারী চিনিযুক্ত অনেক খাবার খান না। ফলে তাদের ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় কম হয়। আসল বিষয়টি হলো, যে যাদের ডায়াবেটিস ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের ডায়াবেটিস নেই এমন লোকদের তুলনায় দাঁতের ক্ষয় বা পেরিওডন্টাল রোগ বেশি হয় না। ভালো স্বাস্থ্যবিধি এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ হলো ডেন্টাল ক্যারিজ এবং পেরিওডন্টাল রোগের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম সুরক্ষা।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডায়াবেটিসবিহীন লোকদের চেয়ে বেশি এবং তাড়াতাড়ি দাঁত হারান :
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের দাঁত নষ্ট হওয়ার পেছনে বা একটি দাঁত হারানোর অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা জিনজিভাইটিস এবং পেরিওডন্টাল রোগের বৃদ্ধির জন্য প্রধান কারণ। যদি সংক্রমণ অব্যাহত থাকে, তাহলে এটি দাঁতের পাশর্^বর্তী অন্তর্নিহিত হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতির জটিলতা হলো যে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণ তত দ্রুত কমানো যায় না। ফলে তারা অকালে দাঁত হারান।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সুসংবাদ হলো, ভালো ওরাল হাইজিন অভ্যাস বা মুখের যত্নের অনুশীলন করার মাধ্যমে যেমন প্রতিদিন অন্তত দুবার (অথবা প্রতি খাবারের পরে) ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করা, প্রতিদিন ফ্লস করা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসে এবং তাতে পেরিওডন্টাল রোগ অনেক কমে যায় এবং দাঁতের অন্যান্য ক্ষতির ঝুঁকিও কম হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের যখন ওরাল সার্জারির প্রয়োজন তখন ইনফেকশনসহ অস্ত্রোপচার করা হলে তারা পরবর্তী সমস্যার ঝুঁকিতে থাকে, কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে অনেক সময়ই শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিকিৎসা যত্ন এবং রক্তে শর্করাকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখাটা জরুরি।
প্রতিরোধ : যেহেতু ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মুখের স্বাস্থ্যের বেশি ঝুঁকি থাকে, তাই মুখের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা এবং মুখের স্বাস্থ্যের যে কোনো পরিবর্তনের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া এবং এ ধরনের পরিবর্তন ঘটলে অবিলম্বে ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। মুখের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ বা কমানোর পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে :
রক্তের সুগার যতটা সম্ভব স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখা। প্রতিটি ডেন্টাল ভিজিটে, ডেন্টিস্টকে ডায়াবেটিসের অবস্থা জানান। উদাহরণস্বরূপ, গ্লাইকোসিলেটেড হিমোগ্লোবিন (HgA1C) মাত্রা জানা জরুরি। (ভালো ব্যবস্থাপনা ৭%-এর নিচে)। অতীতে যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম থাকে (হাইকোগ্লাইসোমিয়া এটিকে ইনসুলিন প্রতিক্রিয়াও বলা হয়) তাহলে আরেকটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সুতরাং সে সব ক্ষেত্র ডেন্টিস্টকে জানানো প্রয়োজন শেষ কবে কখন এ অবস্থা হয়েছিল, কত ঘন ঘন এ ধরনের পর্বগুলো ঘটে এবং আপনি কখন ইনসুলিনের শেষ ডোজ নেওয়া হয়েছে (যদি ইনসুলিন নিয়ে থাকেন)।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি টিপস : বছরে অন্তত দুবার দাঁত এবং মাড়ি পরিষ্কার করা প্রয়োজন Dental Scaling এবং সেই সঙ্গে ডেন্টিস্টের কাছে মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করা। কত ঘন ঘন চেকআপের প্রয়োজন হবে তা ঠিক করতে ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। দিনে অন্তত একবার ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা প্রয়োজন (বিশেষত রাতে খাবারের পর) তাতে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে প্লাক জমা হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।
প্রতিবার খাবার পর দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। একটি নরম ব্রিসল টুথব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন। যারা ডেনচার (নকল দাঁত) পরেন, তাদের সেগুলো সরিয়ে দাঁত পরিষ্কার এবং প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে সেটা খুলে একটি কাপে পানিতে ভিজিয়ে রাখা প্রয়োজন। ধূমপান ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের রোগ বৃদ্ধি করে এবং চিকিৎসা-পরবর্তী জটিলতা সৃষ্টি করে।
আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে ছেড়ে দেওয়ার উপায় সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
স্বাস্থ্যকর হাসি বজায় রাখার জন্য এখানে তিনটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ রয়েছে : দিনে দুবার ব্রাশ করুন, সকালে নাশতার খাবার পরে ও রাতে আহারের পরে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দিনে দুবার দুই মিনিটের জন্য ব্রাশ করার পরামর্শ দিয়েছে। আপনার টুথব্রাশটি মাড়ির সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণে রাখুন এবং দাঁতগুলোর বাইরে-ভিতরে এবং চিবানো পৃষ্ঠতল বরাবর ব্রাশটি আলতো করে সামনে পিছনে ব্রাশ করুন এবং সে সঙ্গে দাঁতের প্রতিটি পৃষ্ঠ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। ম্যানুয়াল বা বৈদ্যুতিক ব্রাশ ব্যবহার করেন কিনা তা বিবেচ্য নয়, তবে ব্রাশের আকারটি সব দাঁতের বাইরে-ভিতরে উপরে নিচে পৌঁছানো সহজভাবে যাচ্ছে কিনা সেটা জরুরি। নরম ব্রিসলযুক্ত টুথব্রাশ ব্যবহার করতে ভুলবেন না। গবেষণায় দেখা যায়, শক্ত ব্রিসলগুলো দাঁতে এনামেল ক্ষয় করে।
দিনে একবার ফ্লস করা প্রয়োজন। যদি তা না করা হয়, তবে দাঁতগুলোর মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে ও মাড়ির রেখা বরাবর ফাঁকে ফাঁকে খাদ্য কণা তৈরি হয়, এই ফ্লস ব্যবহার দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগের জন্য একটি উত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ফ্লস করতে, আপনার মাঝের আঙুলের চারপাশে একটি ১৮ ইঞ্চি পরিমাণ ফ্লস বা সুতা বের করুন, কাজ করার জন্য এক বা দুই ইঞ্চি রেখে দিন। আপনার থাম্ব এবং তর্জনীর মধ্যে ফ্লসটি ধরে রাখুন, প্রতিটি দাঁতের চারপাশে বাঁকা করুন এবং আলতো করে এটি দাঁতের উপরে এবং নিচে এবং মাড়ির ভিতরে প্রবেশ করুন। ডেন্টাল ফ্লস এমন জায়গায় পৌঁছানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যা নিয়মিত টুথব্রাশ পারে না।
বছরে অন্তত দুবার দাঁতের ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। ডাক্তার মাড়ির স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতি ছয় মাসে একবার দাঁত পরিষ্কারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে যত্নবান হতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী
অনারারি সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ বারডেম জেনারেল হাসপাতাল। কো-অর্ডিনেটর, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট।