বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রপ্তানিকারক হিসেবে দেখতে চাই

ড. মো. মফিজুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ)

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রপ্তানিকারক হিসেবে দেখতে চাই

সারা দেশের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ১ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অর্থনীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান রাখছেন। ২০২৪ সালে এই অবদান ৩২ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন এসএমই ফাউন্ডেশন।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- বাণিজ্য সম্পাদক রুহুল আমিন রাসেল

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের এসএমই খাত ও ফাউন্ডেশনের বর্তমান পরিস্থিতি কী?

ড. মো. মফিজুর রহমান : সারা দেশে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তার সংখ্যা এখন ১ কোটি ছাড়িয়েছে। এ খাতে প্রচুর নীতি সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার এসএমই খাতে এগিয়ে আসেনি। এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব আর্থিক সক্ষমতা কম। ২০০৮-৯ অর্থবছরে সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনকে যে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, তারপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে এসএমই ফাউন্ডেশনের আর্থিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মকান্ড বিকশিত হয়নি। বর্তমানে এফডিআরে রাখা ওই ২০০ কোটি টাকায় বছরে যে ২০ কোটি টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই সারা বছর এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। পাশাপাশি প্রতিবছর রাজস্ব খাত থেকে এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য পৃথক বরাদ্দ দাবি করছি। এ খাতের উন্নয়নে সারা দেশের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই খাত থেকে উদ্যোক্তাদের রপ্তানিকারক হিসেবে তৈরি করতে চায় এসএমই ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি পণ্যের ক্লাস্টার ভিত্তিক রপ্তানিকারক তৈরি করতে চাই। তাদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের ব্যবস্থা করছি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পণ্যের বাজারজাতকরণে কী করছে এসএমই ফাউন্ডেশন?

ড. মো. মফিজুর রহমান : সব দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারী-উদ্যোক্তাদের নিয়ে আসা ও তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন নারী-উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজার সংযোগ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্পূর্ণ দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ডিসপ্লে সেন্টারের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাগণ সারা বছর তাদের পণ্য ক্রেতা সাধারণের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ পাবে। অ্যাডভাইজরি সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে দেশব্যাপী নতুন ব্যবসা তৈরি ও পরিচালনার বিষয়ে দিক নির্দেশনা, ব্যবসায়িক তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার উদ্যোক্তা ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নারী-উদ্যোক্তা সাপ্লাইয়ার্স ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এসএমই ক্লাস্টার উন্নয়নে করণীয় কী?

ড. মো. মফিজুর রহমান : জাতীয় অর্থনীতিতে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্লাস্টারগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে এসএমই ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিতকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০১৩ সালে ফাউন্ডেশন সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে এবং ম্যাপ আকারে সব ক্লাস্টারের অবস্থান লিপিবদ্ধ করেছে। ক্লাস্টার উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ কার্যক্রমের আওতায় মোট ৭৫টি এসএমই ক্লাস্টারের চাহিদা নিরূপণ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ক্লাস্টারের চাহিদা নিরূপণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাস্টারের চাহিদার ভিত্তিতে ক্লাস্টারভিত্তিক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বল্প সুদে অর্থায়ন, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সারা দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্লাস্টার চিহ্নিত করে উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। অতি সম্প্রতি সাভারের ভাকুর্তা জুয়েলারি ক্লাস্টার, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় মৃৎ শিল্প ক্লাস্টার, ঝালকাঠি সদর উপজেলার শীতলপাটি ক্লাস্টার ও মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাঁশ-বেত ক্লাস্টারের অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের পণ্যের মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়নে কী করছে এসএমই ফাউন্ডেশন?

ড. মো. মফিজুর রহমান : এসএমই ফাউন্ডেশন দেশের নারী-উদ্যোক্তাদের পৃথক উইংয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করছে। নারী-উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও নারী-উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৩০০টি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ৯ হাজারের বেশি নারী-উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষণার্থীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশব্যাপী ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, পণ্য বহুমুখীকরণ এবং নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার নারী-উদ্যোক্তা উপকৃত হয়েছেন। ‘নারী আইসিটি ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলায় ৩ হাজার নারী-আইসিটি উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রপ্তানিকারক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এসএমইদের অর্থায়নে কীভাবে সহায়তা করছেন?

ড. মো. মফিজুর রহমান : করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেড় মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন মাসে ২০০ কোটি টাকা সফলভাবে বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ঋণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের ৫০ শতাংশই ৫ লাখ টাকার চেয়ে কম ঋণ নিয়েছেন।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এসএমই ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ড. মো. মফিজুর রহমান : ফাউন্ডেশনকে নতুন উচ্চতায় নিতে কার্যক্রম ঢেলে সাজানো শুরু হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ কৌশলগত পরিকল্পনার কাজ চলমান রয়েছে। উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় দক্ষতা, মার্কেট লিংকেজ এবং ফাইনান্সিয়াল লিটারেসি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসএমই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছে উন্নতমানের সেবা এবং প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

সর্বশেষ খবর