বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

খাদ্য মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার

মানিক মুনতাসির

খাদ্য মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার। ২ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্যের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ১২ হাজার ৬৮২ টন। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৫১১, গম ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৪৮ এবং ধান ৯৩৯ টন। যা এক মাস আগে ছিল ১৬ লাখ টন। এদিকে সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে আরও ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন ও মজুদ বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করে সরকার।

এদিকে বিশ্বজুড়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এর সঙ্গে একমত হয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও বলেছে, বৈশ্বিকভাবে যে হারে আমদানি পণ্য ও খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ছে তাতে মূল্যস্ফীতির ঘোড়াকে সামলে রাখা কঠিন হবে। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে গত দুই মাসে। শীতের মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এর ফলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমবে বলে মনে করে সরকার। তবে অন্য খাতের মূল্যস্ফীতির কমার তেমন কোনো আভাস নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এরই মধ্যে গত অক্টোবরে বাংলাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশে উঠেছিল। এ ছাড়া চীন, ভারত, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডাসহ বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোতে অতিরিক্ত বন্যা, খরা কিংবা দাবানলে বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফলে উৎপাদন কমেছে। আগামী মৌসুমেও উৎপাদন কম হবে ব্যাপক হারে। এ জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করেছেন খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে। এ অবস্থায় নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে মজুদ বাড়াচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও খাদ্য উৎপাদন এবং মজুদ বাড়াতে উদ্যোগ নেয়। এ জন্য কৃষি খাতের ভর্তুকি কমানোর আইএমএফের প্রস্তাব নাকচ করে তা প্রায় তিন গুণ করা হয়েছে।

এদিকে গত জুনের প্রথমদিকে জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে এ বছর খাদ্যশস্যের ফলন কম। এতে খাদ্যের বাজার নিয়ে গভীর শঙ্কা রয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খাদ্যপণ্যের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ভারতসহ বেশির ভাগ গম রপ্তানিকারক দেশে এ বছর ফলন কমবে। একমাত্র রাশিয়ায় বাম্পার ফলন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের আরেক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এ বছর চীনে সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এতে দেশটির অন্তত ১০টি অঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। ফলে দেশটির প্রায় ৪ লাখ হেক্টর কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্য বছরের তুলনায় দেশটিতে অন্তত ২০ শতাংশ উৎপাদন কম হবে।

অস্ট্রেলিয়াতেও ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খরা হয়েছে। যার ফলে সেখানেও ৪.৮ বিলিয়ন ডলারের কৃষি ক্ষতি হয়েছে। যা সেখানে উৎপাদনের ওপর তো বটেই বিশ্ববাজারে ব্যাপক হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া ইতালি ও ভারতেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, আগামী কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে। এই সংঘাত কমপক্ষে ১ কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, যা তৈরি করতে পারে দুর্ভিক্ষ। সহসাই যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেই দুর্ভিক্ষ চলতে পারে কয়েক বছর।

যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি বছরব্যাপী দীর্ঘ না হয় তাহলে এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যপণ্যের দাম কমাতেও ভূমিকা রাখবে। ফলে দেশে মানুষের খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তাও নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ খাদ্য মজুদ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে সরকার।

এর অংশ হিসেবে আগামী মৌসুমেই এই মজুদ ২০ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।  কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন ধান এবং দানা জাতীয় ফসল মিলে সাড়ে ৪ কোটি টন খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর